মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

বন্যার অন্যায়!

বন্যার অন্যায়!
ডক্টর তুহিন মালিক
এক. ভারতের বাঁধগুলো খুলে দেওয়ায়
দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের
প্রায় সবকটি জেলা ভয়াবহ বন্যায়
প্লাবিত হয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী
ভারতীয় রাজ্যগুলো দিয়ে ব্রহ্মপুত্র,
তিস্তা ও গঙ্গা নদী বাংলাদেশে
প্রবেশ করায় বানের পানিতে
প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন
এলাকা। ইতিমধ্যে দিনাজপুরে
রেলপথ ও মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে
গিয়ে সারা দেশের সঙ্গে রেল
যোগাযোগ এবং ঢাকার সঙ্গে সড়ক
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পর্যন্ত পানি
ঢুকে পড়েছে।
দুই. ২০ জেলায় লাখ লাখ মানুষ এখন
পানিবন্দী। শুধু গত দুই দিনের বন্যায়
শিশুসহ ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
প্রতিনিয়ত হুরহুর করে বাড়ছে মৃতের
সংখ্যা। ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ২৩ স্থানের
বাঁধ ভেঙে গেছে। আগামী এক
সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার পূর্বাঞ্চলসহ
নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে
যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা পাউবোর।
এবার ১৯৮৮ সালের মত ভয়ংকর বন্যার
আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিন. অথচ ভারত সৃষ্ট এই প্রলয়ংকরী
বন্যার বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন
প্রতিবাদ নেই! ভারত শুস্ক মওসুমে
বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে, আর
বর্ষায় বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের জলে
ভাসায়! অথচ যেখানে চাতক পাখির
মতো ভারতের কাছ থেকে একফোঁটা
তিস্তার ন্যায্য পানির আশায় চেয়ে
থাকি; সেখানে ভারতের কাছ থেকে
ন্যায্য পানি না পেয়েও ‘কুছ তো
মিলা’ বলে সান্ত্বনাটুকু খুঁজে পেয়ে
বন্ধুত্বের বগল বাজাই!
চার. বাংলাদেশের কাছ থেকে
প্রত্যাশার চাইতেও বেশী পেয়েছে
ভারতীয়রা। কিন্তু আমরা ভারতের
কাছ থেকে পেয়েছি শুধুই ভুঁরিভুঁরি
আশ্বাস! তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-
নদীর ন্যায্য হিস্যায় পানিবণ্টন
আদায়ে আমাদের রাজনৈতিক
দৈন্যতা প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ
ভারত সফরেই দেখা গেছে! ১৯৭৫
সালে "মাত্র ৪১ দিনের জন্য
পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে"-
বলে ফারাক্কা ব্যারাজ চালু
করেছিল ভারত। ৪২ বছর পার হলেও এই
পরীক্ষামূলক পানি প্রত্যাহার আজো
চালুই রয়ে গেল!!!
পাঁচ. দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জাতীয়
স্বার্থে এগুলোর প্রতিবাদ করার কেউ
যেন আর অবশিষ্ট নেই! স্বাধীনতার
বিপক্ষের শক্তি হয়ে যাওয়ার ভয়ে
সবাই যেন জাতীয় স্বার্থে
কোনভাবেই মুখ খুঁলতে নারাজ!
ভারতের সাথে আন্তঃরাষ্ট্রীয়
কিংবা ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
যা-ই থাকুক না কেন, জাতীয়
স্বার্থের প্রশ্নে আমাদের জনগণের
রয়েছে প্রচণ্ড আবেগ আর ন্যায্য
অধিকার প্রাপ্তির প্রত্যাশা। কিন্তু
শুধু ভারত একা নয় আমাদের সরকারও
আমাদের প্রত্যাশা পূরণে চরমভাবে
ব্যর্থ! সেই ১৯৭২ সাল থেকেই
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত
আমাদের মুলা ঝুলিয়ে রেখেছে।
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও তারা বারবার
মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চলেছে।
সীমান্ত হত্যা আজও বন্ধ হয়নি!
কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীরা আজো
ন্যায়বিচার পায়নি!
ছয়. ভারতের সমর্থনে একটি
অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ক্ষমতায়
আসা সরকার নিজেদের গদি
রক্ষার্থে যেভাবে জাতীয় স্বার্থকে
বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে
তারা স্বাভাবিকভাবেই ভারতের
কাছ থেকে ন্যয্য দাবী আদায়ের সব
শক্তিটুকু নিঃশেষ করে ফেলেছে।
তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে,
ভারত সৃষ্ট বন্যার এই অন্যায় রুখে
দাড়াবে কে?
লেখক : আইনজ্ঞ ও সংবিধান
বিশেষজ্ঞ
drtuhinmalik@hotmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সূরায়ে ফাতিহা!

সূরা আল ফাতিহার বাংলা ও ইংরেজি অর্থ ইসলাম ডেস্ক: সূরা ফাতিহা (মক্কায় অবতীর্ণ), এর আয়াত সংখ্যা 7 ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢ...