সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

ব্লক নয় প্রয়োজন প্রতিবাদের

ইনবক্সে ব্লক নয়, প্রয়োজন
প্রতিবাদের
17 Jul, 2017
প্রযুক্তি যেভাবে সমগ্র পৃথিবীকে
এক ক্লিকেই ঘরের বেডরুম পর্যন্ত
প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে তাতে
ভবিষ্যতে বৈশ্বিক সংস্কৃতির উপর
এটি কিভাবে প্রভাব ফেলবে তা
এখনই বলা খুবই কঠিন। প্রযুক্তির
কল্যাণেই সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ফেসবুক সারাবিশ্বে এতোটাই
জনপ্রিয় হয়েছে যে, যারা
টেলিভিশন দেখাকে হারাম বা
খারাপ কাজ মনে করতেন, তারাও
এখন ওয়াজ করে ফেসবুকের গুণগান
করছেন।
শুধু তরুণ-তরুণীদের কাছেই নয়।
বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছেও এটি ধীরে
ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অবসর
নিঃসঙ্গ মানুষের জন্যও এক বিরাট
আশ্রয়। চাকুরীতে নিয়োগের
ক্ষেত্রেও খুব সহজে একজন প্রার্থীর
প্রোফাইল ঘেঁটে তার ব্যাপারে তথ্য
নেয়া যায়।
আগে দূরদেশে থেকে চিঠি পেতে
যেখানে দু’সপ্তাহ সময় লাগতো, এখন
একটি মেসেজেই তা তাৎক্ষনিক
ভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিওকলে
সরাসরি লাইভে কাছের মানুষকে
দেখা যাচ্ছে! মনেই হয় না যুক্তরাষ্ট্র
কানাডা জাপান হাজার হাজার
মাইল দূরে। হারিয়ে যাওয়া অনেক
পরিচিত জন আত্মীয়, বন্ধুকে খুঁজে
পাওয়া যাচ্ছে একটি সার্চ ক্লিকের
মাধ্যমে। কেউ কেউ মানুষের জীবন
রক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করে দিচ্ছে।
সাহায্য করছে দুস্থ মানুষদের।
ফেসবুকের অসংখ্য ইতিবাচক দিক
থাকলেও সাথে সাথে এ কথাটিও
বলতে হয় যে উন্নত দেশগুলো যেভাবে
নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, তা
পৃথিবীর অন্যান্য সকল দেশের সভ্যতা
ও সংস্কৃতির সাথে উপযোগী নয়।
তাই খুব সহজে হাতে পাওয়া কোন
সুবিধার ব্যবহার না জেনেই আমরা
সহসাই তার অপব্যবহার করে ফেলি।
এতে আমাদের মোটেও আফসোস হয়
না। আর বিবেকেও বাঁধে না।
আমরা সামান্য পরিচয়ের সুযোগেই
বিনা অনুমতিতেই দিয়ে বসি অডিও
ভিডিও কল। প্রবেশ করে ফেলি
একেবারে একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে।
অনলাইনের সবুজ লাইট দেখলেই
আমরা ভাবি যেহেতু আমি এবং
তিনি উভয়েই অনলাইনে, সেহেতু
তাকে অনবরতই মেসেজ দিয়ে যাওয়া
যায়। দেয়া যায় ভিডিও কল এবং
অনাকাঙ্ক্ষিত অনলাইন ভালো
লাগালাগির প্রস্তাব।
খুব সহজেই আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে
সীমা অতিক্রম করে ফেলি।
সেখানে স্থান কাল পাত্র ভাবতে হয়
না। আত্মসম্মান জ্ঞান করতে হয় না।
বুঝতে হয় না অপর প্রান্তের
রিসিভার হয়তো একান্তই ব্যক্তিগত
ভাবে সময় কাটাচ্ছেন।
নিকট আত্মীয় ছাড়া ফেসবুক বন্ধুত্ব
এখন মামার বাড়ীর আবদারের মতো
এক ধরনের বন্ধুত্বের নাম। যেখানে
প্রেমিক-প্রেমিকা, সিনিয়র-জুনিয়র,
মালিক-শ্রমিক, পরিচিত-অপরিচিত
সকলেই এক কাতারের বন্ধু। বৈশ্বিক
এই বন্ধুত্বে এখন বাংলাদেশও
পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের অতি
সাধারণ দিনমজুর ও একজন
ড্রাইভারের হাতেও একটি
স্মার্টফোন এবং একটি ফেসবুক
অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
ঘরের গৃহকর্মীও জানে ফেসবুক এবং
সেলফি কি, কেমন এর ব্যবহার।
যেহেতু এটি ক্রমেই সকল শ্রেণীর
মানুষের ভাব প্রকাশের একটি
মাধ্যম। তাই অপরিচিত একজন
ব্যক্তির কাছে বন্ধুত্বের দাবী করে
কারো ব্যক্তিগত জীবনে শিষ্টাচার
বহির্ভূত আচরণ করে বিরক্তির কারণ
যেন কেউ না হয়ে যায় সেদিকে
অবশ্যই আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে

বলতে চাচ্ছি ইনবক্সের মেসেজ
অপশনের শিষ্টাচারের বিষয়ে।
কয়েকদিন আগে আমাকে একজন সুন্দরী
স্মার্ট নারী ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট
পাঠিয়েছেন। বেশ কয়েকদিন পর তার
ইনফো চেক করতে গিয়ে দেখি
সেখানে লেখা ‘কোন হারামজাদা
আমার বায়োডাটা জিজ্ঞেস
করবিনা’ ঠিক এমন কথাটিই লেখা
রয়েছে সেখানে। আমি হতভম্ব হয়ে
গেলাম এ কথা দেখে ! এই ভেবে যে,
এমন কথাও কেউ ওপেনলি লিখতে
পারে! আগে কখনো তো কারো
প্রোফাইলে এমন কথা চোখে পড়েনি!
যাই হোক, তখন সেই নারীর ওই লেখা
দেখে সে সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করিনি
। আমাদের সাথে একজন সহযোদ্ধা
নারী লেখকও তার ইনফোতে
লিখেছেন তার ‘ইনবক্সে আলাপে’
আপত্তি আছে। ‘নিতান্ত প্রয়োজন
ছাড়া মেসেজ দেবেন না’। এটিও
অনেকদিন আগেই আমার চোখে
পড়েছিলো। দু’জনের ইনফরমেশনের এ
দু’টি বক্তব্য দেখে প্রতিক্রিয়ায়
আমার তখন মনে হয়েছিলো বন্ধু
হলেতো মেসেজ দিতেই পারে।
বিশেষ দিনে, উৎসবে, জন্মদিনে
কুশলাদি বিনিময় হতেই পারে। এতে
দোষের কিছু নেই। বিরক্ত লাগলে
রেসপন্স না করলেই হলো। এটি ছিলো
আমার আগের মতামত।
কিন্তু গত দু’সপ্তাহের মতো সময় ধরে
ইনবক্স মেসেজ নিয়ে আমার যা
অভিজ্ঞতা হলো, তাতে আমার
আগের উদারতা একেবারে জানালা
দিয়ে হু হু করে পলায়ন করলো। এখন এ
নিয়ে তাদের মতোই আমার মনে
হচ্ছে, ‘কি যাতনা বিষে কভু
আশীবিশে দংশেনি যারে’।
অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের যন্ত্রণা যে
ভোগ না করেছে, সে কখনো বুঝবে না
শিষ্টাচার, বিবেচনা বিহীন মানুষ
কতোটা বিরক্তিকর, কতোটা
ইন্টারফেয়ারিং, কতোটা
অবিবেচনাপ্রসূত এবং কতোটা ‘আঙুর
ফল টক’ জাতীয় নারী বিদ্বেষী হতে
পারে! তবে মানুষের ব্যক্তিত্বে
পার্থক্য থাকবে এটিই স্বাভাবিক।
তাই এখানে ঢালাও ভাবে শুধু
পুরুষদের কথা বলা হচ্ছে না, বলা
হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষের কথা।
অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে
লৈঙ্গিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে
কয়েকটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার
করতে চাই। নাম না বলে একজন
পরিচিত সাংবাদিকের কথা বলি।
তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ। একদিন রাত
বারোটার সময় দূরদেশে থাকা আমার
ছেলের সাথে অনলাইনে কথা
বলছিলাম। তিনি অনবরত নক করেই
যাচ্ছেন করেই যাচ্ছেন।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি
এতো রাতে বার বার নক করছেন
কেনো? উত্তরে তিনি আমাকে
জিজ্ঞেস করলেন আমি রাতে কেনো
অনলাইনে। আমি তখন তাকে
জিজ্ঞেস করি আমি কয়টার সময়
অনলাইনে থাকবো সেটি কি আপনার
অনুমতি নিয়ে আসতে হবে? আপনার
এহেন শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং
অনধিকার চর্চার জন্য আপনাকে ব্লক
করা হলো।
গত দু’মাস আগে আমি ছুটি কাটাতে
পরিবারের সাথে কানাডায় ছিলাম।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার
মোবাইল ফোনটি আমার সন্তান এবং
স্বামীর নাগালের কাছেই থাকে।
মেসেজ আসলে তারাই ঘোষণা দেয়
আমার মেসেজ এসেছে। এক ফেসবুক
বন্ধু পর পর তিনটি ‘অপ্রত্যাশিত’
মেসেজ দিলো। তার পরিচয় একজন
স্টাফ রিপোর্টার। পরিচয়টি ফলাও
করে তার ইনফোতে লেখা রয়েছে।
সাথে ফোন নম্বরটিও দেয়া আছে।
মেসেজটি দেখার সাথে সাথেই
আমি স্ক্রিনশট নিয়ে রাখি। তারপর
সন্তর্পণে মুছে দেই। কিন্তু মুছে
ফেলেও আমি শান্তি পাচ্ছিলাম
না। মনে হচ্ছিলো এর একটি প্রতিবাদ
করা উচিৎ। অন্যথায় অন্যত্র তারা
একই ধরনের আচরণ করবে। এ
পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলবেন, ‘কী
দরকার এতো অচেনা বন্ধুর? খাল
কেটে কুমিরকে দাওয়াত করে বাড়ী
নিয়ে আসার দরকারটি কী? এ কথায়
সাধারণ একটি যুক্তি আছে। এবং এ
কথা খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটি
সহজ সমাধান।
কিন্তু জনকল্যাণে কোন কিছু আশা না
করেই যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করার জন্য এ মাধ্যমটি
বেছে নিয়েছেন, তাদের জন্য এ
ধরনের পরামর্শ একজন প্রতিবাদী
মানুষের প্রকাশের সত্ত্বাকে
গণ্ডিবদ্ধ করে দেয়। এ ধরনের পরামর্শ
নিপীড়নকারীকে উৎসাহিত করে।
শিষ্টাচার বহির্ভূত মানুষকে আরো
কুৎসিত করে তোলে ।
বনানী ধর্ষণ ঘটনায় অনেকেই
যেভাবে বলেছিলেন ‘মেয়েরা
কেনোইবা ছেলেদের পাতা ফাঁদে
ধরা দেবে’? ‘ধর্ষণের কারণ ছোট
পোশাক’। এ ধরনের মন্তব্যগুলো এক
ধরনের ভিক্টিম ব্লেইমি দর্শন।
তাতে নিপীড়ন কারীরা ভেবে
নেবে ফেসবুক মাধ্যমেও তারা পেশী
শক্তি দেখিয়ে আধিপত্য বিস্তার
করার অধিকার রাখে। এখানেও এটি
প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে রাতে
নারী কেনো অনলাইনে?
যেহেতু অনলাইনে, তাই তাকে সহসাই
খারাপ ভেবে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই
লেখা যায়। অশোভন প্রস্তাব দেয়া
যায়। তাই নারীর প্রতি অশ্রদ্ধা
পোষণকারী এ ধরণের মানুষকে ব্লক
বা রিমুভ করে কোন লাভ হবে না।
তারা এক জায়গায় ব্লক হয়ে আরেক
জায়গায় বিরক্ত করবে। তাই অপশন
খোলা রেখেই এদেরকে প্রতিহত
করতে হবে। প্রমাণ রেখে তা প্রকাশ
করে সামাজিক ভাবে হেয় হওয়ার
কথা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।
প্রয়োজন মানুষের প্রতি মানুষের
শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো। বেড়ালের
সাথে রাগ করে ভাত খাওয়াতো বন্ধ
করা যাবে না তাই না? আমাদের
লেখালিখি, মতামত প্রকাশ,
যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে? যারা
চিন্তা চেতনায় পেছনে পড়ে আছেন
তাদেরকে শানিত করার জন্য
প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে না ?
নারীবিদ্বেষী, সংখ্যালঘু বিদ্বেষী,
ধর্মান্ধ-পুরুষতান্ত্রিক মন
মানসিকতার অনগ্রসর এইসকল
ব্যক্তিদের মানসিকতার পরিবর্তন
লেখালিখি, প্রতিবাদের মাধ্যমেই
করতে হবে।
সাবিনা শারমিন : আন্তর্জাতিক
এয়ারলাইন্সের প্রশিক্ষক, কলাম
লেখক।
sharminakhand007@yahoo.com
উৎসঃ poriborton

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সূরায়ে ফাতিহা!

সূরা আল ফাতিহার বাংলা ও ইংরেজি অর্থ ইসলাম ডেস্ক: সূরা ফাতিহা (মক্কায় অবতীর্ণ), এর আয়াত সংখ্যা 7 ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢ...