বন্যা পরিস্থিতি
পর্যবেক্ষণে ওসমানীনগর
উপজেলা প্রশাসন
কন্ট্রোল রুম খুলেছে
জুবেল আহমদ সেকেল:
অতিবৃষ্টি
ও পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর
পানি বেড়ে গিয়ে ও কুশিয়ারা
ডাইক ভেঙ্গে । সিলেটের
ওসমানীনগর উপজেলায়
কুশিয়ারা তীরবর্তী সাদীপুর,
পশ্চিম পৈলনপুর, বুরুঙ্গা, উমরপুর
ও উছমানপুর ইউপির বেশীর ভাগ
অঞ্চল ও গোয়ালাবাজার,
তাজপুর ও দয়ামীর ইউনিয়নের
কিছু অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে
পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে
পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকারে
লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা দুর্গত
এলাকায় সার্বক্ষনিক মনিটরিং
রাখতে ওসমানীনগর উপজেলা
প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউএনও’র
কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা
হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি
বর্যবেক্ষণে রাখতে কন্ট্রোল
রুমের প্রধান দায়িত্ব দেয়া
হয়েছে উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তার কার্যালয়ের সিএ
রেজাউল আলমকে। এর সাথে
সাথে দুর্গত এলাকা থেকে
সার্বক্ষনিক যোগাযোগ ও
বিভিন্ন তথ্য প্রদানের জন্য সর্ব
সাধারণের জন্য একটি জরুরী
০১৯২৯৩৩৬৬২৯ মোবাইল নম্বার
রাখা হয়েছে। উক্ত মোবাইল
নম্বার অথবা ইউএনও মো.
মনিজুরজ্জামানের সরকারী
মোবাইল নম্বারে ফোন করে
বন্যা দুর্গত এলাকার যে কোনো
তথ্য সরবরাহ সহ আজ শনিবার
জনপ্রতিনিধিদের রোপর্ট করার
জন্য ইউএনও, কার্যালয় থেকে
অনুরোধ করা হয়েছে।
বন্যা দূর্গত মানুষের মাঝে
উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ
তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ইতিমধ্যে উপজেলায় প্রাকৃতিক
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ৪ হাজার
পরিবারকে ৩ মাস ৮ দিনের জন্য
প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল ও নগদ
৫০০ টাকা করে বিতরণ কার্যক্রম
শুরু হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে
উপজেলার প্রায় ২ হাজার
পরিবারকে ঈদের ভিজিএফ কার্ড
বিতরণ করা হয়। ৬শ’ বন্যার্ত
পরিবারের মধ্যে ঈদের আগে
ভিজিএফ (ত্রাণ) বিতরণ করা
হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে
ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার ৩শ’
পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে
মোট ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক
সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান
রয়েছে। উপজেলার শতাধিক
দুস্থদের মাঝে জনপ্রতি নগদ ১
হাজার টাকা করে আর্থিক
সহায়তা প্রদান, ঈদের আগের
দিন ২০০ পরিবারকে উপজেলা
প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের
পক্ষ থেকে ঈদের (সেমাই, চিনি,
দুধ, তেল ও চাল) ত্রাণ সহায়তা
প্রদান করা হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসকের
কার্যালয় থেকে গত ২৯ জুন
ওসমানীনগর উপজেলায়
বন্যার্তদের জন্য আরো ৮
মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৬
হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা
হয়েছে যা জরুরী ভিত্তিতে
বিতরণ করা হবে।
এ দিকে সিলেটের ওসমানীনগরে
বন্যা কবলিত এলাকা সহ
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে
ডায়রিয়া পানি বাহিত চর্ম
রোগ সর্দি কাশি ও ভাইরাস
জাতীয় জ্বরের প্রকোপ দেখা
দিয়েছে। এ সব রোগে শিশু বৃদ্ধ
থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের
নারী পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।
রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওযায়
প্রতিদিন সরকারী উপ-স্বাস্থ্য
কেন্দ্র গুলো ও প্রাইভেট
চিকিৎসকের চেম্বারে চিকিৎসা
নিতে রোগীরা ভির করছেন।
উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা
সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা
যায়, উপজেলার শতভাগ বন্যা
কবলিত সাদীপুর ইউপি সহ বন্যা
কবলিত ইউপিতে বেশীর ভাগ
গভীর নলকুপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ
খাবার পানির অভাবে বন্যার
পানি পান করে শিশু বৃদ্ধ সহ
অনেকেই ডায়রিয়া আক্রান্ত
হয়েছেন। সাদীপুর ইউপির লামা
তাজপুর গ্রামের আজির
উদ্দিনের শিমু পুত্র তোফায়েল
আহমদ(০৩), গজিয়া গ্রামের
আরশাদ আলীর শিশু পুত্র
সাফুয়ান(০২), খসরুপুর গ্রামের
নজরুল ইসলামের ছেলে তানবির
(০৫), সম্মানপুর গ্রামের তছন
মিয়া(৩৫), সুন্দিকলা গ্রামের
দিলওয়া মিয়া(২৭) এবং গজিয়া
গ্রামের আলী হোসেন রানার
ছেলে ইয়ামিন(৩) ডায়রিয়ায়
আক্রান্ত হয়। আলী হোসেন
রানা ছেলে ইয়ামিনকে নিয়ে
তাজপুর প্যারাডাইজ ক্লিনিকে
দুই দিন থেকে চিকিৎসা দিতে
হয়েছে। এ দিকে সাদীপুর ইউপির
অন্যান্য গ্রাম সহ বন্যা কবলিত
বুরুঙ্গা, পশ্চিম পৈলনপুর, উমরপুর,
গোয়ালাবাজার, তাজপুর.
উছমানপুর ও দয়ামীর ইউপির
বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে
ভাইরাস জ্বর, সর্দি কাশি, চর্ম
রোগ সহ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস
রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
সাদীপুর ইউপির গজিয়া গ্রামের
বাসিন্দা ধারা ভাষ্যকার আলী
হোসেন রানা বলেন, বন্যার
কারণে বাড়ি ঘর ও নলকুপ
পানিতে ডুবে যাওয়ায়
ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে।
আমার ছেলে ইয়ামিনও
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল।
তাকে দুদিন হাসপাতালে
রাখতে হয়েছে।
বুরুঙ্গা সরকারী উপ-স্বাস্থ্য
কেন্দ্রের সহকারী চিকিৎসক
সাফায়াত হোসেন বলেন, বন্যার
পর থেকে ভাইরাস জ্বর, সর্দি
কাশি ও চর্ম রোগ নিয়ে
প্রতিদিন ানেকেই আসছেন
চিকিৎসা কেন্দ্রে।
গোয়ালাবাজারের এমবিবিএস
চিকিৎসক ইকবাল মাসুদ বলেন,
প্রতিদিন আমি যত রোগী দেখি
এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগই
ডাইরিয়া সর্দি কাশি জ্বর সহ
বিভিন্ন ভাইরাস রোগে
আক্রান্ত। দিন দিন এর তীব্রতা
বাড়ছে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান
বন্যা কবলিত এলাকায়
ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবার
বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,
বিভিন্ন ইউপিতে থেকে মানুষ
ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর
পাচ্ছি। আমাদের উপজেলা
হাসপাতাল না থাকায়
চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত অসুস্থ
রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে
টিম গঠন করতে বালাগঞ্জ
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে
চিঠি দিয়েছি। ওসমানীনগরের
উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোকে
সক্রিয় রাখা হয়েছে। বন্যা
দুর্গত এলাকার ব্যাপারে
সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখতে
গত বৃহস্পতিবারে আমার
কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা
হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে
বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং
করছি। যে কোনো মারাত্মক
পরিস্থিতি মোকাবেলা
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন