ফারহানা পারভীন মুক্তাকে সাথে নিয়ে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রবিউল ইসলাম, সময়ের কণ্ঠস্বর-
কতটা যন্ত্রণায় দগ্ধ হলে একজন মানুষ ‘বোবা’ হয়ে যায় ?
আবাসিক
হোটেল থেকে উদ্ধারের পর গত ১১ দিনে হাসপাতালে চিকিতসকদের নিবিড়
তত্ত্বাবধানে জ্ঞান ফিরেছিলো হতভাগ্য এই তরুনীর। কিন্তু সবার শত চেষ্টাতেও
একটিবারের জন্য কথা বলেনি মিথিলা! শুধু দুচোখে অশ্রু গড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল
চোখে তাকিয়ে থাকতো। কখনো দুচোখ কুচকে আসতো অসহ্য ঘৃনায়! কখনোবা যেন নিজেকেই
দায়ী করে সব যন্ত্রণা মেনে নেবার অভিব্যক্তি থাকতো চোখে মুখে। অবশেষে
অজানা সেই যন্ত্রণা বুকে চেপেই টানা ১১ দিন চিকিৎসাধীন থেকেই মৃত্যু হলো
রহস্যময়ী এই তরুনীর! মৃত্যুর পরেও শত চেস্টাতে মিলেনি এই তরুনীর সঠিক
পরিচয়। এখন অবধি কেওই আসেনি স্বজনের পরিচয়ে অন্তত লাশের দায় নিতে।
কে এই হতভাগী তরুনী? দেখুন, কেও কি চেনেন তাকে ?
রাজধানীর
মোহাম্মদপুর থানাধীন শ্যামলীর একটি আবাসিক হোটেল তাজিন থেকে অচেতন অবস্থায়
উদ্ধার হওয়া তরুণী মিথিলা (২২) টানা ১১ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা
মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। হোটেল থেকে মারাত্মক আহত
অবস্থায় উদ্ধারের ১১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর মৃত্যু হলেও এখনো কোন স্বজন
মিলেনি মিথিলার।
গত ৯ জুলাই শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানাধীন
শ্যামলীর একটি আবাসিক হোটেল তাজিন থেকে অচেতন ও ক্ষত অবস্থায় মিথিলাকে
উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তাদের ধারণা, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেল রুমে নিয়ে
ধর্ষণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যু
নিশ্চিত ভেবে পালিয়ে যায় ওই যুবক। তবে হতভাগীনি ঐ তরুনী বেচেই ছিলো মৃত্যুর
সাথে লড়াই করে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা
মোহাম্মদপুর থানার এসআই আজিজুল হক।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
সূত্রে জানা গেছে, তরুণীটি হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন । ওই
বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি)
তত্ত্বাবধানে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পর তরুণীর জ্ঞান ফিরলেও কিন্তু তিনি কারো
সঙ্গে কোনো কথা বলেননি একটিবারের জন্যেও । হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শি
কয়েকজন জানান, গত কদিনে একবারও সে কোনো কথা বলেনি। কোনো খাবারও খায়নি। তার
আশেপাশে কতো রোগী, অভিভাবক, ডাক্তার, সেবিকা আসা- যাওয়া করছেন। তাকে কথা
বলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো কিছুই বলতে পারছে না। শুধু বুকচাপা
কান্নায় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন তিনি।
এর আগে গত গত ১৭ জুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়,মিথিলার
শারীরিক অবস্থারও কোনো উন্নতি হয়নি তবে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষতগুলো
মোটামুটি ভালো হয়েছিলো। হাসপাতালের বেডে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন অসহায় ঐ
তরুনী। হোটেল কক্ষে উদ্ধার হবার দিনের ছবিসেদিন
এই প্রতিবেদককে হাসপাতালের কর্তব্যরত সেবিকারা জানিয়েছিলেন , মিথিলা কোনো
খাবার খেতে পারছেন না। শুধু স্যালাইন দিয়েই তাকে রাখা হয়েছে। সে তার শরীর
নাড়াচাড়া ও কথা বলতে পারছে না। চিকিৎসকরা তার অবস্থার উন্নতি এবং তাকে কথা
বলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে শুরু থেকেই বিছানায়
পড়ে আছেন।
মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক আজিজুল হক জানিয়েছিলেন,
মিথিলার স্বজনদের খুঁজে বের করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। তার
আঙুলের ছাপ নিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার
সেদিন জানান, মিথিলার জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করা হচ্ছে। তার চেতনা ফিরিয়ে
আনার জন্য চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। ওসিসি ও গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা তার
দেখাশুনা করছেন। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট থেকে মিথিলার শরীর থেকে অনেক আলামত
সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি জানিয়েছিলেন, এ ধরনের রোগীরা ভালো হতে সময়টা
একটু বেশি লাগে। তবে মিথিলার জন্য এইচডিইউতে বা অন্য কোথাও ভালো বেডের
আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি আবাসিক হোটেল
থেকে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয় । এ ঘটনায় হোটেলের
ব্যবস্থাপক ও এক কর্মচারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ বলেছিলো
ঘটনাটি রহস্যজনক।
পুলিশ সূত্রে জানাযায়, গত শনিবার ৯ জুন সকাল সাড়ে
৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের বিজলী মহল্লায় তাজিন আবাসিক হোটেলের রিসিপশনে আসেন
দুই তরুণ-তরুণী। তরুণ নিজেকে আশরাফ ও তরুণীর নাম মিথিলা আক্তার লিখে ১০৭
নম্বর কক্ষটি ভাড়া নেন। হোটেল কক্ষে ওঠার সময় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দাবি করে
একটি কাবিননামাও দেখান হোটেল কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার
চণ্ডিপুর গ্রামের ঠিকানা দিয়ে হোটেলে ওঠেন।
এরপর দুপুরের দিকে আশরাফ
নামধারী তরুণ হোটেল থেকে বেরিয়ে যান। আর ফিরে আসেননি। বিকেল ৪টার দিকে
হোটেলের এক কর্মী ওই কক্ষে গোঙানোর শব্দ শুনতে পান। চাপানো অবস্থায় থাকা
দরজা ধাক্কা দিয়ে ওই কর্মী ভেতরে ঢুকে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় তরুণীকে
দেখতে পান এবং কর্তৃপক্ষকে জানান। একইদিন রাত ১০টার দিকে হোটেল কর্তৃপক্ষ
বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে তরুণীকে উদ্ধার করে
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে তাঁকে ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় হোটেলের ব্যবস্থাপক মাকসুদুর রহমান ও কর্মী আশিকুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
মোহাম্মদপুর
থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর ঘটনার পরদিন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, ‘ঘটনাটি
উদ্ঘাটনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তরুণীর জ্ঞান ফিরলে তাঁর কাছ থেকে সব জানা
যাবে। আমরা সেই অপেক্ষায় রয়েছি। ’ মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক আজিজুল
হক জানান, আশরাফ নামধারী যুবককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।যে
কাবিননামাটি দেখিয়ে দুই তরুণ-তরুণী হোটেলে উঠেছিলেন সেটি ভুয়া বলেও জানান
এই পুলিশ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত ২২ মে রাতে মতিঝিলের ফকিরাপুলের
হোটেল আল-আমিনে রীনা আক্তার নামের এক নারী খুন হন। তাঁর স্বামী টিপু সুলতান
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁদের সঙ্গে ২১ দিন বয়সী
সন্তানও ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন