হোলি আর্টিজান :
প্রতিরোধ, প্রত্যয় ও
প্রত্যাশা
মো. আছাদুজ্জামান মিয়া |
ইফতার শেষ। কন্ট্রোল রুম থেকে
সার্বিক পরিস্থিতির খবর নিচ্ছিলাম।
হঠাৎ ডিসি গুলশানের ফোন। ফোনটি
ধরতেই তিনি জানালেন, গুলশানের ৭৯
নম্বর সড়কে একটি রেস্তোরাঁয়
সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে। পুলিশের
দল সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলি
করলে সন্ত্রাসীরাও পাল্টা গুলি
করেছে। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের
পাশাপাশি সোয়াটকেও দ্রুত
ঘটনাস্থলে পাঠাতে হবে। তখন বললাম,
‘আমি নিজেই আসছি। তোমার যত
ফোর্স লাগে, নিয়ে নাও। সম্পূর্ণ
রেস্টুরেন্ট কর্ডন করে ফেলো।
কোনোভাবেই যেন কোনো সন্ত্রাসী
পালাতে না পারে। সর্বোচ্চ শক্তি
নিয়োগ করো। সোয়াট, ডিবি এখনই
যাচ্ছে।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যার পর হোলি
আর্টিজানে হামলার প্রথম খবরটি
এভাবেই এল। আমার গাড়িটি বাসাতেই
ছিল। কোনো রকম দেরি না করে
বাসায় যেভাবে ছিলাম, সে
পোশাকেই (সিভিল) গাড়িতে উঠে
বসলাম। এর মধ্যেই ডিসি গুলশান ফোনে
জানালেন, ‘রেস্তোরাঁটির নাম হোলি
আর্টিজান। সম্ভবত ভেতরে বিদেশি
নাগরিক আছে। সন্ত্রাসীরাও ভেতরে।’
গাড়ি নিয়ে ৭৯ নম্বর রোডের পূর্ব
মাথায় হোলি আর্টিজানের একেবারে
মূল গেটে পৌঁছে যাই।
ওখানে ডিসি গুলশান, ডিসি
ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি, এডিসি
গুলশান, এসি গুলশান, ওসি গুলশান,
এডিসি ডিপ্লোমেটিক
সিকিউরিটিসহ ডিবির সদস্যরা
ছিলেন। তাঁদের কাছ থেকে জানলাম,
আনুমানিক রাত পৌনে নয়টার সময়
কয়েকজন অল্প বয়সী ছেলে হাঁটতে
হাঁটতে ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি
করতে থাকে। গুলির শব্দ শুনে ওই
এলাকায় টহলের দায়িত্বে থাকা
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই)
ফারুক হোসেন উপস্থিত হয়ে চার-
পাঁচজন ছেলেকে অস্ত্র হাতে বের হয়ে
আসতে দেখলে তাদের চ্যালেঞ্জ
করেন। ছেলেগুলো পুলিশ দেখেই
পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে এবং
গ্রেনেড ছোড়ে। এতে দুজন কনস্টেবল
আহত হন। এসআই ফারুক তখন আড়াল
নিয়ে পাল্টা গুলি করতে থাকেন।
হোলি আর্টিজানের দক্ষিণে লেক ভিউ
ক্লিনিক। জিম্মি উদ্ধারের জন্য
নিয়োজিত পুলিশের একটি দল
বেকারিটির পশ্চিম দেয়ালের পাশ
থেকে প্রথম একজন বিদেশি জিম্মিকে
উদ্ধার করে। তিনি ছিলেন একজন
আর্জেন্টাইন, রেস্তোরাঁটির পাচক।
লোকটি কোনো রকমে পালিয়ে
ড্রেনের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন। তাঁকে
দেয়ালের ওপর দিয়ে এ পাশে নিয়ে
আসা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বাংলা
বা ইংরেজি কোনোটিই ভালো বলতে
পারেন না। ভাষাগত সমস্যার কারণে
তাঁর কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য
পাচ্ছিলাম না। তবে তিনি যতটুকু বলতে
পারছিলেন, বুঝলাম, ভেতরে বেশ
কয়েকজন সন্ত্রাসী আছে। তারা
বিদেশিদের গুলি করেছে এবং ছুরি
দিয়ে আঘাত করেছে।
হোলি আর্টিজানে ঢোকার মুখে
হাতের বাম দিকে একটি বহুতল ভবনের
সামনের ফুটপাত ঘেঁষে আমরা অবস্থান
করছিলাম। ভেতরে কী ঘটছে, তখন
সেটা জানাই সবচেয়ে বেশি দরকার
ছিল। পুলিশের নজরদারি দল হোলি
আর্টিজানের পাশের বহুতল ভবনের
দোতলার একটি বাসায় উঠে গুরুত্বপূর্ণ
কিছু তথ্য সংগ্রহ করে। ওই বাসায় এক
বিদেশি দম্পতি ছিল। তাদের জানালা
দিয়ে হোলি আর্টিজানের দোতলার
কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছিল। এতে
নিশ্চিত হই যে সন্ত্রাসীরা ভেতরেই
রয়েছে।
আটকে পড়া জিম্মিদের সার্বিক
অবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা
যাচ্ছিল না। এ জন্য কিছু কৌশল নেওয়া
অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কৌশল হিসেবে
ভেতরে থাকা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে
যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু হয়।
হ্যান্ডমাইকে তাদের আত্মসমর্পণ করার
জন্য বলা হয়। এমন সময় আমরা জানতে
পারি যে পাশের লেক ভিউ ক্লিনিকের
নিচতলার বারান্দায় সাত-আটজন
লোক আটকা পড়েছেন। সেখানে
কোনো সন্ত্রাসী নেই নিশ্চিত হয়ে ওই
জিম্মিদের উদ্ধারের জন্য ডিসিকে
(গুলশান) নির্দেশ দিলাম। গুলশান ও
বনানী থানার দুই ওসির নেতৃত্বে পৃথক
দুটো দল গঠন করা হয়। তখন আমরা হোলি
আর্টিজানের দিকে উঁচুতে ব্ল্যাঙ্ক
ফায়ার করতে করতে হোলি
আর্টিজানের ফটক থেকে প্রায় সাত-
আট গজ ভেতরে ঢুকে যাই। লেক ভিউ
ক্লিনিকে আটকে পড়া লোকদের হাত
উঁচু করে বের হয়ে আসতে নির্দেশ
দেওয়া হয়। তাঁরা সবাই বের হয়ে
এলেন।
তাঁদের উদ্ধার করে হোলি
আর্টিজানের বাইরের গেট পার হয়ে ১০
থেকে ১২ গজ এসেছি মাত্র। এ সময়ই
পেছনে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ
পেলাম। তাৎক্ষণিকভাবে সবাই ৭৯
নম্বর সড়কের দুই পাশের ভবনগুলোর
নিচে যে যেখানে পারি, অবস্থান
নিলাম। মুহূর্তের মধ্যে দেখি আমার
ডানে, বামে ও পেছনে বহু পুলিশ সদস্য
রক্তাক্ত, আহত অবস্থায় পড়ে আছেন।
অ্যাডিশনাল কমিশনার (ক্রাইম),
এডিসি (গুলশান), ওসি (গুলশান), এসি
(গুলশান), বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ,
গুলশান ফাঁড়ির ইনচার্জ, পিআই বনানী,
ডিবির অনেক সদস্যসহ প্রায় ৩০ জন
সহকর্মী স্প্লিন্টারের আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত, মারাত্মকভাবে আহত।
একজন অফিসারকে রক্তাক্ত অবস্থায়
মাটিতে কাতরাতে দেখলাম। তিনি
ছিলেন ডিবির এসি রবিউল করিম।
আমার ঠিক দুই গজ বামে ঘুরতে ঘুরতে
মাটিতে পড়ে যান বনানী থানার ওসি
সালাহউদ্দিন খান। ৭৯ নম্বর সড়কের
পূর্ব প্রান্তে তখন কেবল রক্ত আর রক্ত,
আমার সহকর্মীদের রক্ত। ওই সময়ের
অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়।
তখন সবাইকে তুলে হাসপাতালে
নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল ছিল না,
ছিল না কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি।
ওই রাতের সবচেয়ে সংকটময় সময় ছিল
তখন। কারণ হোলি আর্টিজানের ফটক
খোলা। সন্ত্রাসীরা দৌড়ে পালিয়ে
গেলে তাদের ঠেকানো কঠিন হয়ে
পড়বে। এমন সময়ই আইজিপি মহোদয়
আমাকে জানান যে তিনি হোলি
আর্টিজানের ঘটনাস্থলে আসছেন।
যেসব অফিসার ও ফোর্স তখনো অক্ষত,
তাঁদের একাংশকে হোলি আর্টিজানের
গেটের দায়িত্ব দিই, যেন সন্ত্রাসীরা
পালাতে না পারে। এই অংশ তখন
দক্ষিণ-পূর্ব দিকে থেমে থেমে ক্রমাগত
গুলি করতে থাকে। অন্য অংশকে
দায়িত্ব দিই হতাহত ব্যক্তিদের
তাৎক্ষণিক শুশ্রূষা এবং হাসপাতালে
পৌঁছানোর। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল
আহত এসি রবিউল ও ওসি বনানীকে
ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে
পাঠানোর কাজটি। বেশ কয়েকবারের
চেষ্টায় ডিসি গুলশান কাজটি করতে
পেরেছিলেন। ওই সময় র্যাব-১-এর
পরিচালক তাঁকে সহায়তা করেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর পেলাম যে এসি
রবিউল আর ওসি বনানী শহীদ হয়েছেন।
দুঃখ হচ্ছিল, ওই দুই পুলিশ সদস্য আমারই
নির্দেশে গুলশান থানা এলাকায়
এসেছিলেন সন্ত্রাসীদের রুখে দিতে।
আমি যে বহুতল ভবনের নিচে ছিলাম,
সে জায়গাটাও ঝুঁকিপূর্ণ, আবার এই
জায়গা ছেড়ে যাওয়ারও উপায় নেই।
স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট অব ভিউ থেকে এই
জায়গায় অবস্থান করা আমাদের জন্য
ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকেই
সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে কার্যক্রম
তদারক করছিলাম। সেখান থেকেই
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মহোদয়কে
ঘটনার বিস্তারিত জানাচ্ছিলাম।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন আমাকে
পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ
সম্পূর্ণ এলাকা কর্ডন করার নির্দেশ
দেন এবং একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে
অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলেন।
মাঠপর্যায়ে (গ্রাউন্ড) সমন্বয়ের জন্য
একটি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম ৭৯ নম্বর
সড়কের পশ্চিম মাথায় ইতিমধ্যে তৈরি
করা হয়েছিল। এর মধ্যে অস্থায়ী
কন্ট্রোল রুমে আইজিপি মহোদয় এবং
অ্যাডিশনাল আইজিপি এসবি উপস্থিত
হয়েছিলেন। আইজিপি মহোদয় নিজেই
অপারেশনের প্রস্তুতিসহ প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে
সোয়াট এবং র্যাবের স্নাইপার দল
আশপাশের উঁচু ভবনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়
অবস্থান নিয়ে হোলি আর্টিজানের
দিকে অস্ত্র তাক করে সতর্কাবস্থায়
রয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও
বিজিবির ডুবুরি দল গুলশান লেকের
মধ্যে টহল কার্যক্রম শুরু করেছে। আর
লেকের ওই পাড়েও কয়েকজন কর্মকর্তার
নেতৃত্বে পুলিশ মোতায়েন করা হলো,
যাতে লেক দিয়ে কেউ পালাতে না
পারে।
লেক ভিউ ক্লিনিকে কোনো সন্ত্রাসী
নেই নিশ্চিত হয়ে মূলত হোলি
আর্টিজান বেকারির ওপর মনোযোগ
দিই। উদ্ধার জিম্মিদের কাছ থেকে
পাওয়া তথ্য, পাশের ভবনের দোতলায়
বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের তথ্য
এবং আমাদের ইন্টেলিজেন্স ও
সার্ভিল্যান্স দলের তথ্য বিশ্লেষণ
করে তখন অনুমান করতে পারছিলাম যে
সন্ত্রাসীরা কম-বেশি বিদেশিদের
হতাহত করেছে। কিন্তু ওরা কী চাচ্ছে,
তা স্পষ্ট ছিল না। হ্যান্ডমাইকে
সন্ত্রাসীদের অনেকবার আত্মসমর্পণের
অনুরোধ করা হলেও ওই প্রান্তে কোনো
সাড়াশব্দ ছিল না।
অভিযানে যেসব সরঞ্জাম দরকার হতে
পারে, সেগুলো নিশ্চিত করতে
অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমকে নির্দেশ
দিলাম। হোলি আর্টিজান লাগোয়া
ভবনের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টা
অবস্থানের পর আমি সোয়াট দলের
কাভারে ঘটনাস্থল থেকে ৭৯ নম্বর
রোডের পশ্চিম প্রান্তে স্থাপিত
অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমে এলাম।
আইজিপি মহোদয়ের নেতৃত্বে আমরা
অস্থায়ী কন্ট্রোল রুমের পাশে একটি
বাড়িতে পরবর্তী অপারেশন পরিকল্পনা
নিয়ে আলোচনায় বসি। সেখানে তখন
অতিরিক্ত আইজি এসবি, ডিজি র্যাব,
অতিরিক্ত কমিশনার (কাউন্টার
টেররিজম), ডিএমপির অতিরিক্ত, যুগ্ম
কমিশনারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা
সংস্থার অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
উপস্থিত হয়েছেন। ডিএমপির সোয়াট
টিম ইতিমধ্যে অভিযানের প্রস্তুতি
নিয়ে ফেলেছে। কীভাবে তারা
অভিযান করবে, তা সোয়াট কমান্ডার
এবং বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট
কমান্ডার ছক করে আইজিপি মহোদয়ের
সামনে উপস্থাপনও করেছেন।
একপর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
পরিচালক, মিলিটারি অপারেশনসের
দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সর্বশেষ
অবস্থা ও করণীয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে
বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরই মধ্যে
রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক সভায়
উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা পেলে
আইজিপি মহোদয়ের সঙ্গে আমরা
সেখানে যাই। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়,
অপারেশনের মূল দায়িত্ব পালন করবে
সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো
ইউনিট, পুলিশ ও র্যাব সহায়ক ভূমিকা
পালন করবে। প্যারা কমান্ডো ইউনিট
সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা সকালে
অভিযান চালাবে।
প্যারা কমান্ডোদের অভিযান শেষ হলে
আমরা হোলি আর্টিজানের ভেতরে
ঢুকি। সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি
নাগরিকসহ মোট ২০ জনকে হত্যা
করেছে। অভিযানে নিহত হয়েছে ছয়
সন্ত্রাসী। পুরো হোলি আর্টিজান তখন
লন্ডভন্ড। সন্ত্রাসীদের লাশগুলো
বাইরের মাঠে থাকলেও অন্য সবার লাশ
ছিল হোলি আর্টিজানের ভেতরে
বিভিন্ন জায়গায়। সবকিছু মিলিয়ে
অপরাধস্থলের আকার ছিল অনেক বড়। এ
জন্য সহায়তা চেয়ে আগেই সিআইডির
অতিরিক্ত আইজিকে অনুরোধ করে
রেখেছিলাম। পড়ন্ত বিকেলে লাশগুলো
অ্যাম্বুলেন্সে কড়া নিরাপত্তায় নিয়ে
যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক
হাসপাতালে।
বেকারির ভেতরে মোট ৩২ জন দেশি-
বিদেশি জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের পেশাদারি ও দক্ষতা এবং
সময়োচিত উপস্থিতির কারণে একজন
জঙ্গিও হোলি আর্টিজান থেকে
পালাতে পারেনি। তাদের ঠেকাতে
জীবন দিয়েছেন পুলিশের দুজন
কর্মকর্তা। আহত হয়েছেন আরও ২৯ জন
পুলিশ সদস্য। তবে এরপরও পুলিশ সদস্যরা
কেউ থেমে থাকেননি। নিজ নিজ
কর্মস্থলে ঠিকই তাঁরা শত শত বিট
পুলিশিং, উঠান বৈঠক করে আর
ভাড়াটে তথ্য ফরম সংগ্রহের মাধ্যমে
জঙ্গি দমনে জনসম্পৃক্ততার দৃষ্টান্ত
স্থাপন করে চলেছেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা
করেছেন ‘জিরো টলারেন্স টু টেররিজম’
পলিসি। তাঁর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে
আজ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-
পেশানির্বিশেষে জঙ্গিবাদের
বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব
নাগরিক ঐক্য। হোলি আর্টিজানের পর
শোলাকিয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট,
ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী,
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা,
সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়
একের পর এক সফল জঙ্গিবিরোধী
অভিযানে আজ জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক
ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। জঙ্গি দমনে
পৃথিবীতে বাংলাদেশ আজ রোল
মডেল। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ও
সোয়াটের সাফল্যের প্রশংসা আজ
দেশে-বিদেশে সর্বত্র। এ পর্যন্ত
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ১৯টি
অভিযানে নব্য জেএমবিপ্রধান তামিম
চৌধুরীসহ প্রায় ৬৬ জন আত্মস্বীকৃত
জঙ্গি নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা
হয়েছে অনেক জঙ্গিকে। উদ্ধার হয়েছে
বিভিন্ন অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক,
সুইসাইড ভেস্ট, বোমা তৈরির সার্কিট
ও অন্য সরঞ্জামাদি। এ সাফল্য শুধু
পুলিশের একার নয়—এ দেশের সব
শান্তিকামী জনতার, যার পুরোভাগে
নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইন্সপেক্টর
জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশের
সরাসরি তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের
মাটি থেকে জঙ্গিবাদের শিকড়
চিরতরে উপড়ে ফেলতে জীবন বাজি
রেখে অহর্নিশ দায়িত্ব পালন করে
চলেছেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক
সদস্য। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,
সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও
সম্পৃক্ততার মাধ্যমেই বাংলাদেশের
মাটি থেকে চিরতরে সন্ত্রাস ও
জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব।
মো. আছাদুজ্জামানমিয়া: কমিশনার,
ঢাকামেট্রোপলিটনপুলিশ, বিপিএম
(বার), পিপিএম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন