শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১৮

কেন ফুটবলে আর্জেন্টিনা সমর্থক হলাম!

আমি কেন ফুটবলে আর্জেন্টিনার
সমর্থক হলাম!
২২ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৫২
গতরাতে মেসি খেলতে নেমেই কেমন
মনমরা ছিলেন৷ জাতীয় সঙ্গীত
চলাকালেও হাত রেখেছিলেন মুখে৷
এরপর পুরো ম্যাচে তাকে আর খুঁজে
পাওয়া যায়নি। আইসল্যান্ডের
বিরুদ্ধেও সপ্রতিভ ছিলেন৷ গতরাতে
কি হয়েছিল! এবার বিভিন্ন কারণেই
আর্জেন্টিনা ফুটবল টিম মিডিয়ার
ফোকাসে। যে ঘটনাটি সবচেয়ে
বেশি আলোড়ন তৈরী করেছে, তা
হলো- ইসরাইলের সাথে প্রীতি
ম্যাচ বাতিল।
আর্জেন্টিনাকে এত সহজে ছেড়ে
দেবে ইসরাইল তা ভাবার কোন কারণ
নেই৷ ইসরাইল কখনোই কাউকে ছাড়ে
নি৷ কাউকে থোড়াই পরোয়া করেছে৷
জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে
পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করে
গেছে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ
করে৷পাখির মতো গুলি করে মানুষ
মারলেও বিশ্ব ছিল নীরব৷ কারণ আর
যাই হোক ইসরাইলের চক্ষুশূল হতে চায়
না কেউ৷এন্টি জায়োনিস্ট তকমা কে
নিতে চায়! পুরো বিশ্ব যেখানে পিঠ
বাঁচানো আর মুখ লুকানোর অভিনয়
করেছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল
একটি চরিত্র৷ইসরাইলের সাথে
প্রীতি ম্যাচ বাতিল করে ইসরাইলের
অহংবোধে চপটোঘাত করেছিলেন৷
ইসরাইল প্রথমে বিশ্বাসই করতে
পারে নি। ম্যাচের টিকেট বিক্রিও
চালিয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রটি
প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত তারা যা
চেয়েছিল তাই হয়েছে৷ অথচ এক
ফুটবলার তাদের বন্দুকের নল বাঁকিয়ে
দিয়েছে৷ অথচ ফুটবল ম্যাচ দিয়ে
তারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে
চেয়েছিল, কাঁটাতারের ওপাশে মৃত্যু
নয়, এপাশে খেলা দেখুন। নিজেদের
শৌর্যবীর্য প্রকাশ করতে চেয়েছিল।
অনেক বিনিয়োগ করেছিল তারা।
সেখানে বাঁধ সাধা চরিত্রটি আর
কেউ নয়৷ বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে।
তার নাম লিওনেল মেসি৷
বিশ্বকাপের কথা বলেছেন। বিশ্বের
অগণিত মানুষের হৃদয়ের কাপ তখনি
জিতে নিয়েছেন মেসি৷ যা তার
আগে কখনোই কোন ফুটবলার করে
দেখাতে পারেনি৷ যদিও ১৯৫৮
সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে
ইসরাইলের কারণে কোয়ালিফায়িং
রাউন্ড বয়কট করেছিল তুরস্ক,
ইন্দোনেশিয়া, মিশর ও সুদান।
রাজনৈতিক ধর্মীয় কারণে তারা
ইসরাইলের সাথে খেলতে অস্বীকৃতি
জানিয়েছিলো। কিন্তু
আর্জেন্টিনার ম্যাচ বাতিল সম্পূর্ণ
ভিন্ন বাস্তবতায়। অমুসলিম একটি
রাষ্ট্র হয়েও ইহুদী বিরোধী আখ্যা
পাওয়ার ঝুঁকি নেয়া আর্জেন্টিনার
পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। কেন! পেছনের
ইতিহাসটা একটু দেখে আসি।
ভাবছেন ফুটবলের মধ্যে কেন
রাজনীতিকে টেনে নিয়ে আসছি৷
তবে বারবার ফুটবল রাজনীতির
শিকার হয়েছে আর্জেন্টিনা। মাঠে
রেফারিদের পক্ষপাতমূলক আচরণের
শিকার হয়েছিল দেশটির ফুটবল টিম।
এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার
প্রতিবাদের কারণেই বিশ্বের
অগণিত মানুষ আর্জেন্টিনার ফুটবলের
ভক্ত। একদিকে ফুটবলে শিল্পের
ছোঁয়া অন্যদিকে রাজনীতির কূটচালে
দেশটির ফুটবল সমর্থকের সংখ্যাও
বেড়েছে৷
আর্জেন্টিনা ১৯৩৮ সালের ফ্রান্স
বিশ্বকাপ, ১৯৫০ সালে ব্রাজিল
বিশ্বকাপ এবং ১৯৫৪ সালের
সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপ বয়কট করে।
পেছনে ছিল প্রতিবাদ। আর্জেন্টিনা
বিশ্বমঞ্চে তখনো নবীন। ১৯৩০
সালের উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত তৎকালীন
জুলে রিমে কাপে অংশ নিয়ে
দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে।
পরবর্তীতে ১৯৩৪ সালে ইটালি
বিশ্বকাপে আবারো যোগ্যতা অর্জন
করে। ওই বিশ্বকাপকে নিজের শক্তি
প্রদর্শনের হাতিয়ার হিসেবে নেন
ইটালির স্বৈরশাসক মুসোলিনী।
রেফারিকে চাপ দিয়ে নিজেদের
পক্ষে ফেভার নিয়ে কোয়ার্টার
ফাইনালে উঠে যায় ইটালি।
কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়
স্পেনের। কিন্তু রেফারি যতই
ফেভার করুক স্পেনকে হারানো সম্ভব
হয়না। পরে ফাউল করা শুরু করে
ইটালি। আহত হয়ে মাঠও ছাড়ে
কয়েকজন। ১-১ গোলে ড্র হয় খেলাটি।
তখনকার নিয়মে খেলা ড্র হলে পরের
দিন আবার ম্যাচ হতো। পরের দিনের
ম্যাচে ইটালির চাপে সাতজন
খেলোয়ারকে বাদ দিয়েই মাঠে
নামে স্পেন। ইটালির দাবি, এরা
ফাউল খেলে। এদের মাঠে নামানো
যাবেনা। মাঠে মুসোলিনি উপস্থিত
ছিলেন। ইটালির প্লেয়ার ফাউল করে
আর রেফারি বাঁশী দেন স্পেনের
বিরুদ্ধে। স্পেন দুইটা গোল দেয়।
রেফারি দুইটাই বাতিল করেন। একটা
ভুয়া অফসাইট। আরেকটা নাকি
বিপক্ষ প্রস্তুত ছিলোনা ফ্রি
কিকের সময়। রেফারি ইটালির। নাম
ছিল রিনাল্ডো বারলাচ্ছিনা।
যেভাবেই হোক কাপ করায়ত্ত্ব করে
ইটালি। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুতেই
ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপের অংশ হয়ে
যায়। পুরো বিশ্ব মুসোলিনীর
সমালোচনা করতে সাহস পায়নি।
একটি দেশ এর বিরুদ্ধে কথা বলে।
দেশটির নাম আর্জেন্টিনা।
কিভাবে!
আর্জেন্টিনা যুক্তি দেয়- যেহেতু
দুটি মহাদেশ ইউরোপ আর ল্যাটিন
আমেরিকা ফুটবল খেলছে, সেহেতু
একটি বিশ্বকাপ ইউরোপ হলে পরবর্তী
বিশ্বকাপ ল্যাটিন আমেরিকায় হতে
হবে। কারণ ইউরোপে তখন যুদ্ধের
সাজ সাজ অবস্থা। যে দেশেই খেলা
হোক তারা ফুটবলকে শক্তি
প্রদর্শনের উৎস হিসেবে ব্যবহার
করবে। আর্জেন্টিনা কৌশল করে
ল্যাটিন আমেরিকার দেশ হিসেবে
নিজেরা বিশ্বকাপের আয়োজক
হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ল্যাটিন
আমেরিকার দেশগুলো তাতে সায়
দেয়। কিন্তু ইউরোপের হিসাব তখন
ভিন্ন। ফ্যাসিস্ট জার্মানী ও ইটালি
একপক্ষে। সোভিয়েট ইউনিয়ন, ফ্রান্স
অন্যদিকে। একপক্ষ ইটালি বিশ্বকাপ
আয়োজন করেছে। পরেরবারের
আয়োজন হওয়ার হকদার হলো
মিত্রপক্ষ। বহু নাটক করে ফ্রান্স
আয়োজক হয়। এতে বঞ্চিত হয় ল্যাটিন
আমেরিকা। প্রতিবাদ জানিয়ে
আর্জেন্টিনা ১৯৩৮ সালের ফ্যান্স
বিশ্বকাপ বয়কট করে। কিন্তু
বেইমানি করে তাতে যোগ দেয়
ব্রাজিল। ব্রাজিলের সাথে
আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে
অন্তর্দ্বন্দ্বের সেই শুরু। ব্রাজিল
বিশ্বকাপে যোগ দিয়ে খুশী করে
ইউরোপীয়ানদের। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়।
অক্ষশক্তির পতন ঘটে। ইউরোপদের
মধ্যে তখন অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে
ইউরোপীয়ান জাতীয়তাবোধের
উন্মেষ ঘটে। পরবর্তী বিশ্বকাপের
আয়োজক হিসেবে ল্যাটিন
আমেরিকা নির্ধারণ করে তারা।
আর্জেন্টিনা এর আয়োজক হওয়ার
দাবীদার আগে থেকেই ছিল। তারাই
হকদার। অথচ ব্রাজিলের আনত মস্তক
ইউরোপীয়ানদের পছন্দ বলে
ব্রাজিলকেই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৫০
সালের বিশ্বকাপের আয়োজক করা
হয়। আর ব্রাজিলের সাথে ফুটবলের
ঠান্ডা যুদ্ধ উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
প্রতিবেশী ব্রাজিল ও
আর্জেন্টিনার এই ফুটবল দ্বন্দ্ব
কাটোনোর জন্য অনেক ফুটবল ম্যাচের
আয়োজন করা হয়েছিল। তা আগুনে
আরো ঘি ঢেলে দেয়। কিভাবে
বলছি।
বর্তমানে যে টুর্নামেন্ট কোপা
আমেরিকা নামে পরিচিত তা ওই
সময় ছিল সাউথ আমেরিকান
চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৩৭ সালের এই
চ্যাম্পয়নশিপের ফাইনাল খেলা
অনুষ্ঠিত হয় বুয়েন্স আয়ার্সে।
ফাইনাল খেলছে দুটি দল
আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। খেলা
শুরু হতেই দর্শকদের মধ্যে মারামরি
লেগে যায়। ব্রাজিলের দর্শকদের
অভিযোগ, আর্জেন্টিনার দর্শকরা
তাদের খেলোয়ারদের বানর আর
মশা বলে চিৎকার করছে। আর
বানরের মতো শব্দ করছে। খেলা
থেমে গেলেও পরে শুরু হয়। ৯০
মিনিটের খেলা গোলশূন্য শেষ হয়।
অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনা
ব্রাজিলকে দুটি গোল দেয়।
ব্রাজিলের খেলোয়াররা গোল মেনে
নিতে নারাজ। অফসাইড এবং
নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তারা
রেফারিকে উপেক্ষা করেই মাঠ
ছাড়ে। ব্রাজিল আর্জেন্টিনা আরো
দূরে সরে যায়।
১৯৩৯ সাল। এবার আর্জেন্টিনা
খেলতে যায় ব্রাজিলে। রিও ডি
জেনেরিওতে। রোকা কাপ। দুই ম্যাচ
খেলা। প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা
৫-১ গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত
করে। এক সপ্তাহ পরে ২য় ম্যাচে
ব্রাজিল প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়ে।
মুহূর্তেই ব্রাজিল গোল দেয়
আর্জেন্টিনাকে। ১-০ গোলে এগিয়ে
যায় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা জবাবে
দুটি গোল দেয়। ব্রাজিল ২-২ গোলে
সমতা আনে। আগের ম্যাচে ব্রাজিল
যে গোলটি করেছিল তা ছিল
সন্দেহজনক পেনাল্টি থেকে।
ব্রাজিলের খেলোয়ার একটু লাগলেই
ডি বক্সে শুয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা এর
প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু রেফারি
গায়ে মাখেননি। এবারের ম্যাচেও
তাই হলো। ব্রাজিলের একজন
প্লেয়ার ডি বক্সে শুয়ে পড়লেন। আর
রেফারি পেনাল্টি দিলেন। তীব্র
প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই ম্যাচে এবার
প্রতিবাদ করলেন আর্জেন্টিনার
খেলোয়াররা। আর্জেন্টিনার
আর্কেডিও লোপেজ রেফারিকে
ধাক্কা দিলেন। রেফারি আঘাত
করলেন। পুলিশ মাঠে নামে।
রেফারিকে উদ্ধার করে।
আর্জেন্টিনার খেলোয়ারদের উপর
বেধড়ক লাঠিচার্জ করে মাঠ থেকে
বের করে দেয়া হয়। আর ব্রাজিল
ফাঁকা গোল পোস্টে পেনাল্টি শট
দিয়ে গোল দেয়। ফুটবলের ইতিহাসে
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার অবতারণা
করেছিল ব্রাজিল। যাই হোক- এ ঘটনা
ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার মধ্যকার
শত্রুতা আরো বাড়িয়ে দেয়।
১৯৪৫ সালে ব্রাজিল আরেকটি ম্যাচে
আর্জেন্টিনাকে ৬-২ গোলে পরাস্ত
করে। পুরো মাঠে মেরে খেলে
ব্রাজিল। ব্রাজিলের Ademir
Menezes আঘাত করে আর্জেন্টিনার
বাটাগ্লিয়েরোর পা ভেঙ্গে দেয়।
এতে দর্শকদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে
পড়ে। ১৯৪৬ সালে সাউথ আমেরিকান
চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আবারো
ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়
আর্জেন্টিনা। ওই ম্যাচে একক নৈপুন্য
দেখাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার
অধিনায়ক জোসে সালমন। কিন্তু
ব্রাজিলের Jair Rosa Pinto
সরাসরি তার পায়ের নলায় আঘাত
করেন। পা ভেঙ্গে দুভাগ হয়ে যায়।
এঘটনায় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার
খেলোয়াররা মাঠে আর দর্শকরা
গ্যালারিতে মারামারিতে জড়িয়ে
পড়ে। পুলিশ খেলোয়ারদের ধরে
ড্রেসিং রুমে নিয়ে যায়। গ্যালারি
খালি করে আবারো খেলা শুরু হয়।
কিন্তু আর্জেন্টিনার অধিনায়ক
সালমনের ফুটবল ক্যারিয়াার
সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এসব ঘটনা
দুই দেশের মধ্যে এতটা শত্রুতা
তৈরী করে যে, আর্জেন্টিনা ১৯৫০
সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ বয়কট
করে।
ব্রাজিলে বিশ্বকাপ আয়োজন
ফুটবলের সবোর্চ্চ সংস্থা ফিফা’র
সাথে ব্রাজিলের গা মাখামাখি
সম্পর্ক তৈরী করে। অন্যদিকে
আর্জেন্টিনা প্রতিবাদের কারণে
দূরেই সরে থাকে। ১৯৫৪ সালে প্রথম
বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়
সুইজারল্যান্ডে। সেই বিশ্বকাপে
অংশ গ্রহণ করেনি আর্জেন্টিনা।
এরপর আর্জেন্টিনা যেই বিশ্বকাপেই
অংশ নিয়েছে রেফারিদের ভালো
ব্যবহার পায়নি। ব্রাজিল ১৯৫৪
সালেই কোয়ার্টার ফাইনালে
হাঙ্গেরির সাথে মারামারি
করেছে। এমনকি খেলা শেষে
মারামারি ড্রেসিং রুম পর্যন্ত
গড়ায়। হাঙ্গেরির একজন খেলোয়ার
ব্রাজিলের একজন খেলোয়ারের মুখে
বোতল দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত
করে দেয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা মার
খেয়েই গেছে। কখনোই পাল্টা আঘাত
করেনি। ১৯৭৮ সালে জনদাবী ছিল ১৭
বছরের খেলোয়ার ম্যারাডোনাকে
বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলানোর জন্য।
কিন্তু কোচ রাজী হননি। কারণ
একটাই। আর্জেন্টিনার খেলোয়ারদের
পায়ে মারা হতো। অনেকের
পেশাগত জীবন শেষ হয়ে গিয়েছিল।
কোচ ম্যারাডোনার জীবনকে হুমকীর
মুখে ফেলতে চাননি। কোচের
সিদ্ধান্তই ম্যারাডোনার জীবনকে
এগিয়ে দিয়েছিল। আর আর্জেন্টিনা
পেয়েছে ইতিহাসের আরেক বীর।
ম্যারাডোনা।
ম্যারাডোনার কাছে আসার আগে
আরেকটি বিষয় বলে নিতে হবে।
আর্জেন্টিনার সাথে রাজনৈতিক
শত্রুতা ছিলো বৃটেনের। সেটা
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে। এই
ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ ইংল্যান্ডের
মাটি থেকে ৮ হাজার ৭৮ মাইল দূরে।
আর আর্জেন্টিনা থেকে মাত্র ৩ শ
মাইল দূরে। অথচ বৃটেন উপনিবেশিক
আমল থেকে তা দখল করে রেখেছে। এ
নিয়ে চূড়ান্ত যুদ্ধ হওয়ার আগে
দুপক্ষে অনেকদিন ঠান্ডা যুদ্ধ ছিলো।
ফলে আর্জেন্টিনা যখনি
ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে, খেলা
ছাপিয়ে ফকল্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ হয়ে
উঠতো। কারণ শক্তির বিচারে
দারিদ্রতায় ক্লিষ্ট আর্জেন্টিনা
ইংল্যান্ডের ধারে কাছেও ছিলোনা।
ফলে আর্জেন্টিনা ফুটবলকেই যুদ্ধ
হিসেবে নিতো। কিন্তু রেফারিদের
ভুমিকায় বারবার হারতে হয়েছে
আর্জেন্টিনাকে। সেটা ইংল্যান্ড-
আর্জেন্টিনার মধ্যকার ১৯৫৩ সালের
প্রথম ম্যাচে বা ১৯৬২ সালের চিলি
বিশ্বকাপে। তবে চূড়ান্ত বিবাদ হয়
১৯৬৬ সালে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের
কোয়ার্টার ফাইনালে দেশ দুটি
মুখোমুখি হয়। এ ম্যাচটাকে
আর্জেন্টিনায় এল রোবো দেল
সিগলো বা ‘শতাব্দীর সেরা চুরি’
নাম দেয়া হয়েছে। কি হয়েছিল
সেদিন! ১৯৫৪ সাল থেকে বিশ্বকাপ
ফুটবল খেলা টেলিভিশনে সম্প্রচার
করা হয়। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি
দর্শকরা বিশ্বকাপের খেলা দেখার
সুযোগ পায়। ১৯৬৬ সালের
আর্জেন্টিনা আর ইংল্যান্ডের
মধ্যকার ম্যাচটি দেখছিলো। আয়োজক
দেশ ইংল্যান্ডের প্রতি রেফারির
পক্ষপাতিত্বের চাক্ষুষ সাক্ষী
দর্শকরা। তখনো আর্জেন্টিনার নাম
মানুষ ভালোভাবে জানতোনা। এমন
একটা অবিচার দেখে মানুষ
আর্জেন্টিনার প্রতি দূর্বল হয়ে যায়।
আর্জেন্টিনার অধিনায়ক রাতিন
এন্টিওনিওকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড
দিয়ে বের করে দেয়া হয়। জার্মান
রেফারি অভিযোগ করেছিলো- তার
সাথে রাতিন খারাপ কথা বলছেন।
অথচ জার্মান রেফারি স্পানিশ
জানতেন না। আর রাতিনও জার্মান
জানতেন না। যাই হোক রাতিন মাঠ
ত্যাগে অস্বীকৃতি জানান। রেফারি
পুলিশ ডাকেন। পুলিশ যখন রাতিনকে
মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যায়, শুধু
আর্জেন্টিনার দর্শকরা নয়, পুরো
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ
আর্জেন্টিনার সাথে একাত্মতা
ঘোষণা করে। যে দলটি কোন
বিশ্বকাপ জিতেনি, অথচ অন্যায়ের
প্রতিবাদ করে বিশ্বমঞ্চের মতো
একটি জায়গায় মাঠ ত্যাগে
অস্বীকার করে তারাই তো প্রকৃত
ফুটবল যোদ্ধা। পরে পরিস্কার
অফসাইড থেকে ইংল্যান্ডে জিওফ
হার্স্ট গোল করেছিলেন।
আর্জেন্টিনার খেলোয়ারদের কথা
কানেই নেননি রেফারি।
আর্জেন্টিনা ওই ম্যাচে হেরে
গেলেও বিশ্বব্যাপী সমর্থক তৈরী
করে। আর আর্জেন্টিনায় তা
রাজনৈতিক রংয়ে রাঙিয়ে দেয়
তার সেনা শাসক। মানুষ
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠে।
সেনা শাসক মনে করেন, ক্ষমতায়
থাকতে এটাইতো বড় সুযোগ। তারা
ফকল্যান্ডের মালিকানা দাবি
করেন। ইংল্যান্ড ধাপে ধাপে
মালিকানা দিতে রাজি হয়। প্রথমে
থাকবে দ্বৈত শাসন। অর্থাৎ
প্রশাসন পরিচালনা করবে ইংল্যান্ড।
আওতাধীন থাকবে আর্জেন্টিনার।
আড়ালে মার্গারেট থ্যাচার অন্য
কৌশল নেন। ভোটের আয়োজন করা হয়
ফকল্যান্ড দ্বীপফুঞ্জে। অধিবাসীরা
ইংল্যান্ডের সাথে থাকার জন্য রায়
দেয়। নিজেদের ভূমি পাওয়ার সুযোগ
শেষ দেখে আর্জেন্টিনা ফকল্যান্ড
আক্রমন করে। অল্প কয়েকজন বৃটিশ
সৈনিককে পরাজিত করে ফকল্যান্ড
দখল করে নেয়। আর্জেন্টিনাবাসী
সবাই রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে
গিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করে।
আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
করে বৃটেন। বৃটেন সেনা পাঠায়। ১৯৮২
সালের ২রা এপ্রিল থেকে ১৪ই জুন
পর্যন্ত চলা যুদ্ধে বৃটেন জয়লাভ করে।
আর্জেন্টিনার ৬৪৯ জন নিহত হন।
পুরো বিশ্বের মানুষের মৌন সমর্থন
আর্জেন্টিনার পক্ষেই ছিল। কারণ
দ্বীপটি তাদের কাছাকাছি। আর
অধিবাসীরাও স্পানিশ ভাষাভাষি।
একটি অন্যায় যুদ্ধে আর্জেন্টিনা
পরাজিত হলেও মানুষের মন জয় করে
নেয় আর্জেন্টিনা।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ত্রের যুদ্ধে
জয়লাভ করতে পারেনি
আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফুটবল দিয়ে
ঠিকই জয়লাভ করেছিলো তারা।
ফকল্যান্ড যুদ্ধে ইংল্যান্ডের ২৫৮ জন
নিহত হওয়ার পর যে ক্ষত হয়েছিল তা
জয়ের পর সেরে গিয়েছিলো। কিন্তু
১৯৮৬ সালে নিজেদের মাটিতে
ইংল্যান্ডকে যে আঘাত করেছিলো
ফুটবল টর্নেডো, গত শতাব্দী পার
হয়ে এ শতাব্দীতেও তার জ্বলুনি
একটুও কমেনি।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল।
ইতোমধ্যে সাদাকালো টেলিভিশন
বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছেঁ
গেছে। পুরো বিশ্ব কাঁপছে ফুটবল
জ্বরে। একজন খেলোয়ার ইতোমধ্যেই
সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। তার নাম
ম্যারাডোনা। এর আগে মানুষ
ব্রাজিলের একজন খেলোয়ারের নাম
জানতেন। কালো মানিক। পেলে।
কিন্তু শুনেই খালাস। তার খেলা কেউ
দেখেনি। ম্যারাডোনার খেলা মানুষ
দেখছে। কি ড্রিবলিং! কি কৌশল!
একাই শাসন করেন ফুটবল মাঠ।
ফুটবলের রাজাকে মানুষ পেয়ে গেছে
তখন। টিমকে একা টেনে নিয়ে
গেছেন। গোল দিয়েছেন। গোল
করিয়েছেন। বিশ্বের মানুষ শ্বাসরুদ্ধ
হয়ে তার খেলা দেখছে। তিনি দলকে
ফাইনালে নিয়ে গেছেন। প্রতিপক্ষ
ইংল্যান্ড। নিজেদের মাটিতে
শক্তিশালি ইংল্যান্ড। আর
বিপরীতে মানুষের ভালোবাসার
বলে বলিয়ান আর্জেন্টিনা।
ফকল্যান্ড যুদ্ধের ঘা তখনো শুকায়নি।
আর বুকে স্মৃতি হয়ে আছে ১৯৬৬
সালের বিশ্বকাপ।
ফাইনাল খেলার আগে আর্জেন্টিনার
টিম এক হলো। ম্যারাডোনা বললেন,
আমাদের বুকে স্বজন হারানোর
দগদগে ঘা এখনো শুকায়নি। জানি
এরা ফুটবল প্লেয়ার। এদের কোন দোষ
নেই। তবে এরাই আমাদের মাটি দখল
করে রেখেছে। আমাদের অর্থ নেই।
অস্ত্র শস্ত্র নেই। আছে দারিদ্রতা।
আর ফুটবল। দারিদ্রতার কারণেই
ফুটবলে লাথি মারা জাতি আমরা।
এটাই আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার
স্থান। খেলা শুরু হলো। ম্যারাডোনা
খেলছেন। ম্যারাডোনার ইচ্ছা, এমন
কিছু করবেন, যাতে ইংল্যান্ড পুড়তে
থাকবে। আজীবন। অবশেষে সবার
চোখ ফাকিঁ দিয়ে গোল করলেন। তাও
আবার হাত দিয়ে। ইংল্যান্ডের গোল
কিপার দেখলেন। দেখলেন কয়েকজন
সতীর্থ। শুধু দেখেননি তিনজন
রেফারি। অগণিত দর্শক।
ম্যারাডোনা তখন দৌড়ে মাঝ
মাঠের দিকে যাচ্ছেন। সতীর্থদের
বলছেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে উল্লাস
করো। সতীর্থ একজন বলছেন, হাতে
গোল। এটা উদযাপন না করাই ভালো।
তিনি বললেন, এটা ঈশ্বরের হাত।
সতীর্থ তখন না বুঝেই উল্লাস
করেছিলেন। পরে দেখেছিলেন,
আর্জেন্টিনার প্রান্ত থেকে বল
নিয়ে একাই দশজন প্লেয়ারকে
কাটিয়ে নিয়ে গোল দিলেন। তখন
বুঝেছিলেন, এই ঈশ্বর কোন ঈশ্বর। শুধু
তিনি না। বিশ্বের অগণিত দর্শকরাও
খুজেঁ পেয়েছিল ঈশ্বর। ফুটবলের ঈশ্বর।
ফুটবল বোদ্ধারা আর বলতে পারেন
না, এরকম গোল দেয়ার ক্ষমতা নিয়ে
আর কোন ফুটবলারের জন্ম হবে কিনা!
কারণ এরকম একটা গোল আগেও কখনো
দেখেনি মানুষ। ভবিষ্যতেও দেখা
যাবে কিনা সন্দেহ। আর সাবেক
উপনিবেশ দেশগুলো ম্যারাডোনার
পায়ের লাথিতে খুজেঁ পেয়েছিল
আনন্দ। সাবেক শোষককে হারানোর
আনন্দ। বাংলাদেশের মানুষও এতে
শামিল হয়েছিল।
আমি তখন ছোট। ক্লাস টু বা থ্র্রিতে
পড়ি। বিশ্ব নিয়ে আমার কি! পাশের
গ্রামটাই আমার কাছে বিস্ময়।
সেখানে কোথায় আর্জেন্টিনা।
খেলাটা দেখেছিলাম। আমাদের
বাড়ির সামনে একটা স্কুল আছে।
সেখানে জেনারেটরের মাধ্যমে
ফুটবল খেলা দেখার আয়োজন করেছিল
কয়েকজন। তখন চিনলাম
ম্যারাডোনাকে। মাথায় চুল।
নায়কের মতো দেখতে। পেছনেও
জুলফি। তখন ফুটবল মানে
ম্যারাডোনা। এই ম্যারাডোনাকে
১৯৯০ সালেও ফাইনালে দেখেছি।
জার্মানি কিভাবে তাকে আঘাতের
পর আঘাত করে কাপটা ছিনিয়ে
নিয়েছে।
আর্জেন্টিনা এরপর কাপ পায়নি
সত্যি। কিন্তু যতবারই তারা
পক্ষপাতিত্বের অন্যায় শিকার
হয়েছে, তাদের সমর্থক বেড়েছে।
হেরে গেলে এদের সমর্থন কমেনা।
বরং বাড়ে। তাদের কর্মকান্ডে।
রাজনৈতিক ফুটবলে গোল দেখা
যায়না। অনুভব করা যায়।
আর্জেন্টিনার সমর্থকরা সেই আনন্দে
টের পান নিয়মিত।
আমি ভাবছি অন্য বিষয়। এবার কি
মোসাদ বসে থাকবে। যাদের এমন
ক্ষমতা। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষের
ম্যাচে এমন কিছু হয়নি তো।
কাজী সায়েমুজ্জামান
ঢাকা, ২২ জুন ২০১৮

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সূরায়ে ফাতিহা!

সূরা আল ফাতিহার বাংলা ও ইংরেজি অর্থ ইসলাম ডেস্ক: সূরা ফাতিহা (মক্কায় অবতীর্ণ), এর আয়াত সংখ্যা 7 ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢ...