বাংলা ভাষার আরেকটি লিপির নাম সিলেটী নাগরী লিপি
সেলিম আউয়াল
সেলিম আউয়াল: পৃথিবীতে অনেক ভাষা প্রচলিত আছে যাদের নিজস্ব বর্ণমালা নেই। কিন্তু বাংলা ভাষায় বাংলা লিপির পাশাপাশি আরেকটি লিপি রয়েছে, সেটি হচ্ছে সিলেটী নাগরী লিপি। অনেকে মনে করতে পারেন হয়তো কিছু পÐিত একটি লিপি উদ্ভাবন করেছিলেন, তারপর লিপিটি প্রয়োগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্যাপারটি সে রকম নয়। সিলেটী নাগরী লিপিটি শুধু কাগজপত্রে নয়, একসময় সিলেট অঞ্চলে ব্যবহারিক জীবনেও খুব প্রচলিত ছিলো। নাগরী লিপিতে বই ছাপানোর জন্য সিলেট কলকাতা শিয়ালদহে ছাপাখানাও ছিলো। নাগরী হরফে অসংখ্য পুথিও ছাপা হয়েছে। এ থেকে স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় নাগরী লিপিতে লেখা পুঁথির খুব প্রচলন ছিলো। কারন ছাপানো বই বিক্রি না হলে কেউ বই ছাপতো না। আর বেশী করে বই ছাপানোর অর্ডার না পেলে কলকাতার মতো জায়গায় সিলেটী নাগরী লিপিতে বই ছাপানোর জন্যে প্রেসেরও সৃষ্টি হতো না। সরকারি পর্যায়ে ছাপাখানা গড়ে উঠলে ধরে নেয়া যেতো হয়তো সিলেটী নাগরী লিপির বিকাশের জন্যে পৃষ্টপোষকতা করার লক্ষ্য এসব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিলেটী নাগরী লিপিতে গ্রন্থ ছাপানোর ছাপাখানাগুলো ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছিলো।
নাগরী লিপি শেখা খুব সহজ
সিলেটী নাগরী লিপি খুব কম সময়ে শেখা যায়। এজন্যে এখনো সিলেটে অনেক বয়স্ক মহিলা পাওয়া যায়, বাংলা বা অন্য কোন বর্ণমালা চেনেন না, কিন্তু নাগরী চেনেন। নাগরী লিপিতে লেখা পুঁথি পড়তে পারেন। কম সময়ে নাগরী শেখা নিয়ে সিলেটে অনেক প্রবাদও জন্ম নিয়েছিলো। যেমন-‘কাজীর ঘরর বাইন্দেও যেলান আড়াই হরফ জানে, অলান নাগরীও হিখা যায় মাত্র আড়াই দিনে।’ অর্থাৎ পরিবেশের কারনে কাজির ঘরের গৃহ পরিচারিকার দু’চারটে বর্ণ শেখা যেমন খুব সহজ, নাগরী শেখাটাও এ ধরনের খুব সহজ বিষয় মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়। এইসব দিক বিবেচনায় সিলেটের মানুষের একটি ব্যতিক্রম হচ্ছে সিলেটের নিজস্ব লিপি সিলেটী নাগরী লিপিতে সাহিত্য চর্চা। বাংলা লিপির বিকল্প লিপি হিসেবে ‘সিলেটী নাগরী লিপি’র উদ্ভব, বিকাশ ও সাহিত্য সাধনা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সিলেট অঞ্চলকে একটি আলাদা মর্যাদা দিয়েছে।
দেবনাগরী, বাংলা, কাইথী ও আরবী এই চারটে লিপিমালা এবং নিজস্ব উদ্ভাবনার সমন্বিত ফসল হচ্ছে সিলেটী নাগরী লিপিমালা। লিপি বা বর্ণমালার নাম সাধারণত স্থানের নামের সাথে জড়িয়ে থাকে, যেমন আরবী লিপিমালা, রোমান লিপি, বাংলা লিপি, কাইথী লিপি ইত্যাদি। সে নিয়মে সিলেটের মাটিতে উদ্ভাবিত, লালিত, বিকশিত এই লিপিমালার নামও ‘সিলেটী লিপি’ নামে অভিহিত হওয়াটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। এ লিপিতে লেখা ভাষা ও সাহিত্যে সিলেট অঞ্চলের মানুষের আনন্দ-বেদনার ছবি ফুটে উঠেছে। নাগরী লিপিকে অনেকটা বিজ্ঞানসম্মত হিসেবে গণ্য করা যায়। সিলেটী নাগরী লিপিতে মোট বর্ণ সংখ্যা ৩৩টি। এরমধ্যে ২৮টি ব্যঞ্জন ও ৫টি স্বরবর্ণ রয়েছে।
নাগরী লিপির ছাপাখানা :
১৮৬০-৭০-এর দিকে সিলেটে নাগরী লিপির প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়া নিবাসী মৌলভী আবদুল করিম ১৮৬০ খৃষ্টাব্দে ইউরোপ সফর করে দেশে ফেরেন। নাগরী লিপির টাইপ বানিয়ে চালু করেন ছাপাখানা। সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে প্রতিষ্ঠিত তার ছাপাখানার নাম ছিলো ‘ইসলামিয়া ছাপাখানা’। সেই ছাপাখানায় প্রথম নাগরী পুঁথি ছাপানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেসটি বোমায় পুড়ে যায়। সেদিনের সিলেট শহরে নাইওরপুল এলাকার সারদা প্রিন্টিং পাবলিশিং নামের আরেকটি ছাপাখানায় নাগরী হরফে পুঁথি ছাপা হতো। ১৯৪৭-এর আগে কোলকাতা (জনপ্রিয় পুঁথি ‘হালতুন্নবি’র প্রকাশক আবদুর রহমান তার ‘পরকাশকের আরজ’-এ বলেছেন‘কলিকাতা মুকামে আর।/ বন্দর বাজারে আমি করি কারবার\) এবং শিয়ালদহেও নাগরী লিপির প্রেস ছিল। কলকাতা থেকেও সিলেটী নাগরী পুঁথি ছাপা হতে থাকে। ফলে নাগরী পুঁথির প্রচার ও প্রসার আরো বেড়ে যায়।
নাগরী লিপিতে বাংলা সাহিত্য চর্চা:
সিলেটের মানুষ চৌদ্দশ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত সার্থকভাবে নাগরী লিপিতে বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে গেছেন। সিলেটী নাগরী হরফ-এ লেখা এ পর্যন্ত সবচেয়ে পুরণো যে পুঁথিটি পাওয়া গেছে সেটি হচ্ছে, ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে গোলাম হুছনের লেখা সুফি শাস্ত্র বা তত্ত¡গ্রন্থ ‘তালিব হুছন’। এ থেকে অনুমান করা যায় এ গ্রন্থটি রচনার অনেক আগে থেকে সিলেটী নাগরী লিপিমালার সাহায্যে বাংলা সাহিত্য-জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা হয়েছিল। এসব বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া যায় খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের ভেতরই সিলেটের ভাষাবিজ্ঞানীরা ‘সিলেটী নাগরী লিপি’ চালু করেছিলেন। বাংলা লিপির মতো ছাপাখানা স্থাপিত হওয়ার অনেক আগে থেকে ‘সিলেটী নাগরী লিপি’ও শুরু হয়েছিলো। নাগরী লিপিতে সাহিত্য সৃষ্টির অনেক পর এর মুদ্রণ শুরু হয়। প্রাথমিক অবস্থায় টাইপ ও ছাপাখানার অভাব থাকলেও হাতে লিখেই নাগরী’র প্রসার ঘটে।
সিলেটী নাগরী বর্ণমালায় সাহিত্য চর্চার ব্যাপক প্রসার ছিলো তার প্রমাণ হচ্ছে, গবেষক পন্ডিতদের সংগ্রহ ও মত অনুসারে এ পর্যন্ত দু’শরও বেশী পুঁথির উলেøখ পাওয়া যায়। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক অধ্যাপক মুহম্মদ আসাদ্দর আলী এক জরীপে ৮৮টি ছাপানো পুঁিথসহ ১৪০টি পুঁিথর অ¯িÍত্বের কথা উলেøখ করেছেন।
নাগরী লিপি সম্পর্কে গবেষক সৈয়দ মুর্তাজা আলীর অভিমত‘নাগরী পুঁথির কতকগুলি ইসলাম প্রচার, কতকগুলি পীর আউলিয়ার জীবনী, কতকগুলি সমাজ সংস্কার, রোমান্টিক কাহিনী, প্রেম-প্রীতিমুলক। এ সকল পুঁথি অশিক্ষিত লোককে মুখে মুখে সান্তনা ও বিশ্রামে আনন্দ দিয়াছে। নাগরী পুঁথি পলøীজীবন সরস করে পলøীবাসীর জনচিত্ত এই লিপিতে লিখিত সাহিত্যকে অবলম্বন করে বিকাশ লাভ করে।’
আঠার-উনিশ শতকে নাগরী চর্চার বিকাশ ঘটে চরম পর্যায়ে। এ সময়ে সমাজের কম পড়ালেখা জানা মানুষ এবং অশিক্ষিত সব ধরনের মানুষ ধর্ম, সাহিত্য আনন্দ বিনোদন এমন কি বৈষয়িক কাজেও খুব বেশী করে সিলেটী নাগরী ব্যবহার করেছেন। ঐতিহ্যবাহী আরবি ফারসি এবং আধুনিক ইংরেজী বাংলা শিক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্বীকৃত না হলেও সমাজের সাধারণ মানুষ সিলেটী নাগরী চর্চার মাধ্যমেই উনিশ শতক অতিক্রম করে বিশ শতকেরও প্রথম দিক কাটিয়ে দেয়।
একসময় আজকের সিলেট বিভাগের পূর্বে আসামের শিলচর, পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের পূর্বতীর, উত্তরে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড় ও দক্ষিণে আজকের কুমিলøা জেলার সীমা পর্যন্ত সিলেটী নাগরীর প্রসার ছড়িয়ে পড়ে। এই উনিশ শতকেই সিলেটী নাগরীর জনপ্রিয় কবি মুন্সী সাদেক আলী, শীতালং শাহ, সৈয়দ শাহ নূর, আরকুম শাহ, ইরফান আলী, নছিম আলী, দৈখুরা (মুবিন উদ্দিন), আবদুল করিম, শাহ আছদ আলী প্রমুখ তাদের কাব্য ও গান রচনা করেছেন। রচনা প্রাচুর্য, বৈচিত্র ও উৎকর্ষ বিচারে উনিশ শতককে
সিলেটী নাগরীর সুবর্ণ যুগ বলা যেতে পারে:
সিলেটী নাগরী লিপিতে সাহিত্য চর্চা কতো ব্যাপক আকারে হয়েছিলো তা অনুমান করা যাবে এ পর্যন্ত সিলেটি নাগরী লিপিতে মুদ্রিত ও পান্ডুলিপি আকারে রচিত পুঁথিগুলোর তালিকা থেকে। নীচে একটি তালিকা নীচে দেয়া হলো: গোলাম হুসন: তালিব হুসন, শাহ হুসন আলম: ভেদসার, দীন ভবানন্দ: মুজমা রাগহরিবংশ, সৈয়দ শাহনূর: নূর নছিহত, সাত কন্যার বাখান, মনিপরি ও ভেদ চৌতিশা, মুন্সী সাদেক আলী: রদ্দেকুফুর, হাসর মিছিল, মহব্বতনামা ও হালতুন্নবী, মুনশি ইরপান আলী: কাশফুল বেদাত, মফিদুল মুমেনিন, আখবারুল ইমান, ছয়ফুল বেদাত, রাহাতনামা, শাহজালালের তয়ারিখ, আপই নামা ও জারমনী পেনা, দৈখুরা মুনশি: সিলেটি নাগরি পহেলা কিতাব ও দৈখুরা রাগ, বুরহান উলøাহ ওরফে চেরাগ আলী: হালতুন্নূর, ইবরত নামা ও রাগনামা, আবদুর ওহাব চৌধুরী: হাসর তরান, ভবতরান, উম্মিতরান ও ভেদকায়া, শীতালং শাহ: মুশিকিল তরান, রাগ বাউল ও কিয়ামত নামা, শাহ আসদ আলী পীর: সহর চরিত, আমান উলøাহ: মফিদুল ইসলাম, রাগমানা, ও ফাজিল নাছির, ওয়াজিদ উলøাহ: হুসিয়ারে গাফেলীন, মাহে রমজান, ও হজনামা, আফজল শাহ: নূর পরিচয় ও ফকিরি ছিজরা, শাহ হরমুজ আলী: দিল নছিহত, হরমুজ নছিহত, ও মিছলে দুনিয়া, আবদুছ ছমদ: নছিহত নামা, আবদুল হাকিম: নছিহত নামা, সৈয়দ শাহ আবদুল কাদির: আহকামে শরাহ, মালেক মোহাম্মদ: আহকামুল জুমা, আরকুম শাহ: কবিনামা ও হকিকতে সিতারা, শাহ মহম্মদ আবদুলøাহ: হজনামা, আবদুল করিম: অজু নমাজের কবিতা ও ওয়াজিবুল আলম, মহম্মদ জওয়াদ: বাহরাম জহুরা, দ্বারকানাথ রায়: বাহার দানেশ, এনায়েত উলøাহ: বাহার দানেশ, মহম্মদ খলিল: চন্দ্রমুখী, ফুলকুমারী ও হাছিনা, হাতিমুর রহমান: আখের তরান, মুনশি জফর আলী: অছিয়তুন নবী, সৈয়দ আসগর আলী ওরফে ছাবাল শাহ: এস্কে দেওয়ান বা প্রেম পাগল, ভেলা শাহ: খবর নিশান, হাজী মোহম্মদ ইয়াসিন: প্রেমারশি, মায়ারশি, তালেবে জামাত, মারিফাতুন নবী, মাজেজাতুন নবী, আশিকে খোদা হুব্বে রছুল, রমণী দপর্ণ ও রুহুল মারিফত, সৈয়দ জহুরুল হোসেন: নূর নাজাত ও মারফতে জওয়াহির, ওয়াহিদ আলী: জঙ্গনামা, শহিদে কারবালা ও হুছন শহিদ, আবদুল করিম(২): সোনাভানের পুথি, ছদছিমছলা ও ওয়াজিবুল আমল, অজ্ঞাত: কড়িনামা, সৈয়দুর রহমান: দেশচরিত, ছমিরুদ্দিন: ইবরতুল ইনছান, মজহারুল হক: তিরিকুন্নবী, আবদুর রহমান: হজরত শাহজালালের পুঁথি, বন্যার কবিতা ও জলালী কবিতা, আবদুর রহমান: হুরমতুলগিনা, মিয়াজান আলী: ইনাম উদ্দিন ছাহেবের তারিফ, ফজল উদ্দিন আহমদ: অলিগণের কবিতা, কারী আবদুল ওয়াহেদ: তওক্কুলিয়া প্রেমভান্ডার, হিফজুর রহমান: তালিমুল ইসলাম, মোবারক আলী: জলের কবিতা, আবদুল মজিদ: বয়ানুল ইমান ও আসিক নামা, সরাফত উলøাহ: আলী আমজদ ও দুই সতীন, ইউসুফ আলী: মউত নামা, হরমুজ উলøাহ: দিলখোশনামা, শেখভানু: পুথি সেকভানু, আবদুর করিম: মফিদুল আওয়াম, আহওয়ালে জমানা, জহুরুল আফেলিন, হরিণনামা, খাছিলত নামা, হুসিয়ার নামা, সফাতুন্নবী, আবু নামা, সিরাজুল মছাইল ও কেরামত হাছন হুছেন, অধীন জফর: আসক নামা, হীন রহমত উলøাহ: হুরমতুলগীনা, কারী ছমির উদ্দিন: ছহি ইবরতুল ইনছান, হীন কবিকার: ছহি পেচার বিচার, হাতিমুর রহমান: আগাজ পুথি, ও আখের তরান, আবদুল আজিজ: মপিদুল আওয়াম।
হালতুন্নবী:
এস এম গোলাম কাদির ‘সিলটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে বলেছেন, মুন্সি সাদেক আলী সিলেটী নাগরী সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় কবি ছিলেন। সিলেটী নাগরী সাহিত্যে তার লেখা হালতুন্নবী সিলেট অঞ্চলের সবচে জনপ্রিয় গ্রন্থ।
এস এম গোলাম কাদির লিখেছেন, আমরা নাগরী পুঁথির সন্ধানে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় একটি সীমাবদ্ধ জরীপ নিয়েছিলাম। তাতে দেখা গেছে, সিলেট জেলার মুসলিম অধ্যুষিত প্রতিটি বর্ধিষ্ঞু গ্রামে একাধিক হালতুন্নবী পুঁথি ছিলো বা এখনো আছে।
মুন্সী সাদেক আলী প্রথম জীবনে হিন্দু ছিলেন। হিন্দু অবস্থায় তার নাম ছিলো গৌর কিশোর সেন। তিনি উচ্চ শিক্ষিত আইনজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। কুলাউড়া উপজেলার লংলা পরগনার দৌলতপুর গ্রামে তার জন্ম। জন্মসাল ১২০৫ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দ। তার হালতুন্নবী ১২৬২ বঙ্গাব্দে রচনা সমাপ্ত হয় অর্থাৎ ১৮৫৫ সালে হালতুন্নবী রচনা করেন। ‘হালতুন্নবী’ হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী গ্রন্থ। এছাড়াও তিনি রদ্দে কুফুর, রদ্দুল হিন্দ, কাশফুল বেদাত, হুশিয়ার নামা, দকেউল বেদাত, হুশিয়ার নামা, দকেউল হুজ্জত, পান্দেনামা প্রভৃতি বই লেখেন।
চন্দ্রমুখি:
নাগরী সাহিত্যের উলেøখযোগ্য আরেকজন কবি হলেন মহম্মদ খলিল। তার কাব্যের নাম চন্দ্রমুখি। চন্দ্রমুখি মধ্যযুগের গতানুগতিক মরমি ভাবধারা সম্পন্ন কাব্যসাহিত্যের ভিড়ে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। এর বিষয়বস্তু মানবিক প্রেম কাহিনী।
নাগরী চর্চায় ভাটা:
বিশ শতকে ধীরে ধীরে সিলেটের মুসলমান সমাজে আধুনিক ইংরেজী বাংলা চর্চার প্রসার ঘটে। জীবন-জীবিকা ও মান মর্যাদার তাকিদে অনেকেই আধুনিক শিক্ষার দিকে ঝুকে পড়েন এবং স্বাভাবিকভাবেই নাগরী-পুঁথির চর্চা কমে আসতে থাকে। এই সময়ে সিলেটের রাজনৈতিক জীবনে দ্রæত আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১১-এর বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক ফলাফল সিলেটবাসীর সমাজ জীবনকেও নাড়া দিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা অধিকার সচেতন হয়ে আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি আরো বেশী মনোযোগী হয়ে উঠেন। তাতে করে অনিবার্যভাবেই নাগরী সাহিত্য কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং কর্মব্যস্ত পুরুষমহল ছেড়ে অপেক্ষাকৃত নিংরঙ্গ নারী মহলে আশ্রয় খুঁজে পায়। সিলেটে নারী মহলে নাগরীর পঠন-পাঠন আজো একেবারে পুরোপুরি মুছে যায়নি।
এদিকে ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে দ্রæত পরিবর্তন, জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তব পাসের ভেতর দিয়ে দুই সংগঠণের প্রতিযোগিতামুলক তৎপরতা বেড়ে যায় এবং পরিণতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান জন্ম লাভ করে। সিলেট সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে অন্তভর্‚ক্ত হওয়ায় সিলেটের সারদা প্রেস বন্ধ হয়ে যায় এবং কলকাতায়ও নাগরী ছাপা বাতিল হয়।
সিলেটের ‘ইসলামিয়া ছাপাখানা’ই তখন কোন রকমে মুমূর্ষ নাগরীর প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছিলো। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটিও বিধ্বস্ত হয়ে সিলেটী নাগরীর মুদ্রণ ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কম্পিউটারে নাগরী ফন্ট:
নাগরী চর্চায় ভাটা আসলেও আশার আলো ফুটে উঠেছে। নাগরী ফন্ট এখন কম্পিউটারে উদ্ভাবিত হয়েছে। গৎ.জড়মবৎ মুিহহ নামের যুক্তরাজ্যের একজন বাসিন্দা প্রথম কম্পিউটারে নাগরী ফন্ট উদ্ভাবন করেন। জড়মবৎ চিরকুমার। তিনি ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভাসির্টি থেকে মর্ডান ল্যাংগুয়েজ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী নিয়েছেন। পেশায় শিক্ষক জড়মবৎ যুক্তরাজ্যের সিলেটীদের কাছে ‘রাজা মিয়া’ নামে পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সময় সিলেটে এসেছেন। সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে পর্যন্ত গিয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক, বিশিষ্ট গবেষক সৈয়দ মো¯Íফা কামাল তার ‘সিলটী নাগরী হরফ: পুঁথি কিতাব ও মাতকথা’ প্রবন্ধে উলেøখ করেছেন ‘সত্তর দশকে আমাদের সিলট একাডেমী সিলেট কর্তৃক প্রকাশিত খফি মুনসি’র লেখা ‘ছিলটী নাগরী হিখা’ গ্রন্থ অবলম্বনে তিনি (গৎ.জড়মবৎ মুিহহ) কেবল পঠন পাঠনই শেখেননি নিজে নিজে লেখতেও শিখেছেন। এমন কি কম্পিউটার ফন্টও তিনি তৈরী করেছেন নিজে নিজে।’
কম্পিউটার ফন্ট তৈরীতে দ্বিতীয় প্রচেষ্টা করেন আক্তার চৌধুরী ভ্রাতৃদ্বয়। এরা হচ্ছেন সিলেট নগরীতে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কম্পিউটার এ্ন্ড ইঞ্জিনিয়ার নামের কম্পিউটার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা খায়রুল আক্তার চৌধুরী ও ফয়জুল আক্তার চৌধুরী। এই দুই ভাই তাদের যুক্তরাজ্য প্রবাসী চাচা বিশিষ্ট নাগরী গবেষক রসায়নবিদ আবদুল জলিল চৌধুরীর নির্দেশনা ও তত্ত¡াবধানে তাদের প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার-এর মাধ্যমে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে নাগরী ফন্ট উদ্ভাবন করেন। খায়রুল চৌধুরী এখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগের উদ্যোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তার ভাই ফয়জুল আক্তার চৌধুরী জালালাবাদ গ্যাসের প্রকৌশলী। এই দুই প্রকোশলী ভাই এম, এ, জলিল চৌধুরীর ৬টি নাগরী বই কম্পোজ করে ছাপা করে প্রকাশ করেছেন। এগুলো হচ্ছে উম্মি তরান, হাশর তরান, ভেদকায়া, রাগ ওহাবী ইত্যাদি।
সৈয়দ মোস্তফা কামাল লিখেছেন, ‘কম্পিউটারে তৃতীয় সিলেটী নাগরী ফন্টের প্রস্তুতকারক হিসেবে এক বৃটিশ দম্পতির নাম উলেøখ করতে হয়। ড. সু আর তার স্বামী জেমস লয়েড উইলিয়াম লন্ডনে স্থাপন করেছেন Star (sylheti Translation and research) এবং এখান থেকেই তারা তৈরী করেছেন সিলেটী নাগরী হরফের কম্পিউটার ফন্ট।’
নাগরী স্যারের নাগরী মিশন:
সিলেটের এমসি কলেজের একজন শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক এরহাসুজ্জামান। তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক। বাড়ি ছিলো সিলেট সদর উপজেলার উমাইর গাঁও গ্রামে। তিনি গণিতের চেয়ে নাগরী স্যার নামেই বেশী পরিচিত ছিলেন। তিনি নাগরী ভাষা ও সাহিত্যের জন্যে এককভাবে যে কাজ করে গিয়েছেন তা অতুলনীয়। তিনি সবসময় সিলেটী ভাষায় কথা বলতেন। নাগরী ভাষা শেখার জন্যে ছোট্ট বই ছেপেছিলেন। কারো সাথে দু’এক কথা হবার পরই একটি নাগরী শেখার বই হাতে ধরিয়ে দিতেন। তার কাজগুলো খুব পরিকল্পিত ছিলো না, কিন্তু একটি বিষয় ছিলো বইটি হাতে নিয়ে সবাই একটু চমকে উঠতো বাংলা লিপির পাশাপাশি সিলেটী নাগরী নামে আরেকটি লিপি আছে। এই চমকে ওঠা অনেককে পরবর্তী জীবনে নাগরী শেখতে আগ্রহী করে তুলেছিলো। ১৯৭৮, ১৯৮৯-এর দিকে সিলেটের এমসি কলেজে বিজ্ঞানমেলা হতো। তখন এমসি কলেজের গণিত বিভাগের একটি স্টল থাকতো। সেই স্টলে দেখা যেতো নাগরী লিপির ছড়াছড়ি।
আরেক নাগরীপ্রেমিক লেখক-রসায়নবিদ এম এ জলিল চৌধুরী তার নয়াসড়কের ভাষা অধ্যাপক এরহাসুজ্জামানের জন্যে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেখানে ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘নাগরী ইন্সটিটিউট’। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে তার পরিকল্পনাগুলো সফল হয়নি। তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে নাগরী বই হাতে তার অবিরাম ছুটে চলা নাগরী লিপি নিয়ে ভাবতে অনেকে উৎসাহিত করেছিলো। অধ্যাপক এরহাসুজ্জামান চিরকুমার। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। তার কাপড়চোপড়-চলাফেরা দেখে কেউ ভাবতেই পারবে না, ইনি একসময় পুরো দস্তুর ‘প্রফেসর’ ছিলেন। এরহাসুজ্জামান তার এলাকায় ‘আয়না পীর’ নামে পরিচিত। এখন তিনি তার পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে হাওরের মধ্যে ছোট্ট একটি ঢিবির উপর নলখাগড়ার ঘর বানিয়ে বাস করেন। কিছু হাঁসমোরগ আর ক’টা ছাগল নিয়ে তার নিজস্ব এক জগত। কিন্তু একজন পুরো দস্তুর ‘প্রফেসর’ সরকারী চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে যে টাকা পান তা দিয়ে শহরে একটি আয়েশী জীবন যাপন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে বেছে নিয়েছেন এক বহেমিয়ান জীবন।
নাগরী লিপি নিয়ে তিনটে পিএইচডি :
নাগরী লিপি নিয়ে গবেষণা করে এ পর্যন্ত তিনটে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জিত হয়েছে। এরমধ্যে এস এম গোলাম কাদির ‘সিলটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্যে’র উপর গবেষণা করে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চামরদানী গ্রামে। তিনি ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রæয়ারি ইন্তেকাল করেন।
ভারতের আব্দুল মুছাব্বির ভূইয়া ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলটী নাগরী লিপির উপর থিসিস লিখে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেছেন। তার Jalabadi nagri, a unique script & literature of Sylheti Bangla’ ‘ শীর্ষক থিসিসটি ইংরেজী ভাষায় মুদ্রিত হয়ে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বই আকারে বেরিয়েছে।
‘সিলেটি নাগরী ঃ ফকিরি ধারার ফসল’ শীর্ষক থিসিসের জন্যে ড. মোহম্মদ সাদিক ২০০৫ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। তিনি একসময় বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচন সচিব ছিলেন। তিনিও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ। এসব কর্মকান্ডের ফলে নাগরী চর্চায় আবার গতি এসেছে।
নাগরী চর্চায় উৎস প্রকাশন:
কম্পিউটারে কম্পোজ হয়ে ইদানীং বেশ ক’টি নাগরী গ্রন্থ বেরিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার উৎস প্রকাশন বিপুল পরিমাণ নাগরী গ্রন্থ প্রকাশ করে সিলেটী নাগরী লিপি চর্চায় নতুন জোয়ার এনেছে। উৎস প্রকাশনীর স্বত্ত¡াধিকারী মোস্তফা সেলিম ও আবদুল মান্নানের সংগ্রহ ও সম্পাদনায় এ পর্যন্ত ২৫টি নাগরী বই প্রকাশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মৌলবী আকবর আলী রচিত আহকামে চরকা, মহম্মদ জওয়াদ রচিত বাহরাম জহুরা, মুহম্মদ খলিল রচিত চন্দ্রমুখী, ছৈয়দুর রহমান রচিত দেশ চরিত, মবিন উদ্দিন মুন্সী (দইখুরা) রচিত দইখুরার রাগ, মুন্সী সাদেক আলী রচিত কেতাব হালতুন্নবী, মুন্সী সাদেক আলী রচিত হাশর মিছিল, মুন্সী আব্দুল করিম রচিত হরিণ নামা, মুন্সী ওয়াজিদ উল্লাহ হুশিয়ার গাফেলিন, মুন্সী আব্দুল করিম রচিত কড়ি নামা, হাজী ইয়াছিন রচিত মায়ারশি দুছরা, মুন্সী সাদেক আলী রচিত মহব্বত নামা, মুন্সী জফর আলী রচিত ওছিওতুন্নবী, সৈয়দ শাহনূর রচিত সাত কন্যার বাখান, আব্দুল করিম রচিত ছদছি মছলা, মুন্সী ইরফান আলী রচিত ছয়ফুল বেদাত, মুন্সী আব্দুল করিম রচিত সোনাভানের পুথি, শাহ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী রচিত ভেদ কায়া, মুন্সী আছদ আলী রচিত সহর চরিত, শাহ আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী রচিত হাশর তরান, শিতালং শাহ রচিত মশকিল তরান, ওয়াহেদ আলী রচিত জংগ নামা, ফকির আমান রচিত ভেদ চরিত, দীন ভবানন্দ রচিত মুজমা রাগ হরিবংশ, শাহ আরমান আলী রচিত নূর পরিচয়।এসব বইয়ে একপাশে নাগরী হরফে লেখা হয়েছে, অপর পাশে বাংলা হরফে লেখা হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে সভা সেমিনারের মাধ্যমে মোস্তফা সেলিম নাগরী লিপির পুথির প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। বিশেষ করে তার প্রচেষ্টা রাজধানী থেকে পরিচালিত হওয়ায়, তা আরো গুরুত্বের দাবী রাখে। এছাড়া যুক্তরাজ্যেও নাগরী লিপির চর্চা শুরুর জন্যে প্রবাসী সিলেটিরাও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
http://www.sylhetexpress.com/news/details.php?id=39922
মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭
বাংলা ভাষার আরেকটি লিপির নাম সিলেটী নাগরী লিপি
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
সূরায়ে ফাতিহা!
সূরা আল ফাতিহার বাংলা ও ইংরেজি অর্থ ইসলাম ডেস্ক: সূরা ফাতিহা (মক্কায় অবতীর্ণ), এর আয়াত সংখ্যা 7 ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤـَﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢ...

-
রাষ্ট্রদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহী ফরহাদ মজহার জুলাই ১৮, ২০১৭ 41 সম্পাদনা: মিয়া মোহাম্মদ হেলাল ফরহাদ মজহার ১৯৭২ সাথে কবি হুমায়ুন কবীর হত্যাকা...
-
রাকিব হাসান: রমজান শেষ। চলছে শাওয়াল মাস। কওমি মাদরাসার ছাত্রদের জন্য শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষা বর্ষ। মাদরাসার নিয়মানুসারে প্রতিবছর শাওয়াল ম...
-
ঈদ বার্তা: পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রিয় বালাগঞ্জ ওসমানীনগর ও সিলেটবাসী, প্রবাসীসহ আওয়ামী পরিবারের নেতা কর্মীদের জানাই ঈদের শুভেচ্ছা...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন